সংবাদ ডেস্ক ::  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১২ জানুয়ারি থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার জেলা সফরে যাবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা আলোকিত বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের জানান, আগামী নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপে যেসব প্রার্থীর পক্ষে ফল ভালো আসবে, তাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। এছাড়া দলকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করার জন্য প্রত্যেক প্রেসিডিয়াম সদস্যকে একটি করে বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করার নির্দেশও দেন। প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি খসড়া তালিকাও করা হয় বৈঠকে। দুই-এক দিনের মধ্যে তা চূড়ান্ত করে দলীয় সভাপতির কাছে জমা দেয়া হবে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, কাজী জাফর উল্লাহ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আবদুর রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মতিন খসরু, আবদুল মান্নান খান ও দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলীয় প্রার্থীর ভোট কম পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলীয় প্রার্থীর বিশাল ব্যবধানে হারের কারণ খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কারা কারা এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন, তাদেরও চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের অতিআত্মবিশ্বাসী হতে নিষেধ করেছেন শেখ হাসিনা।

বিএনপি প্রার্থীর এত বেশি ভোট পাওয়া নিয়েও অসন্তোষ ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতির মধ্যে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী যে পরিমাণ ভোট পেয়েছে, এ পরিমাণ ভোট পাওয়ার কথা ছিল না। তারা আন্দোলনের নামে যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, আমরা যদি ঠিকভাবে এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারতাম, তাহলে তারা যে ভোট পেয়েছে তার চেয়ে অনেক কম ভোট পেত। আগামী দিনে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।’
সরকারের উন্নয়ন সঠিকভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরার পরামর্শ দেন তিনি। দলীয় প্রার্থী হারলেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয় বৈঠকে।

একইসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও পরিচিত এমন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের আশ্বস্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক নাম এসেছে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণা করার পর মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক থেকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও পরিচিতি, এমন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে আগামী দিনের দলীয় কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেত্রী বলেছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জরিপ হচ্ছে। যাদের ফল ভালো হবে, তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে।’
এছাড়া সদ্যপ্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগরের প্রয়াত সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহমেদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here