সংবাদ ডেস্ক ::  লোকমুখে অনেক প্রশংসা শুনেছি বিছনাকান্দির। অনেক গল্প পড়েছি আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের গোয়াইনঘাট-এ অবস্থিত ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেসা সুন্দরের লীলাভূমি ‘বিছনাকান্দি’র কথা। জীবনের যখন যেখানে যা কিছু দেখে মুগ্ধ হয়েছি, হৃদয়ের সুরভি মেখে আমি তার উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছি। এবার যাবো বিছনাকান্দি। ভ্রমণ তো আর একা হয় না। তাই ফোন দিলাম বন্ধু নোমানকে। কারণ ভ্রমণ জমে আমার তার সঙ্গেই বেশ। বললাম, প্রস্তুত হয়ে থাকিস ভ্রমণের জন্য। কোন আপত্তি ছাড়াই খুশি মনে রাজি হয়ে গেলো মুহূর্তেই। দেরি না করে সঙ্গে নেওয়ার মতো যা আছে তা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আম্বরখানা হয়ে সালুটিকরের রাস্তা দিয়ে চললাম বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের উদ্যেশ্যে। রাস্তা তো নয় যেন তা এক করকট পাথরের কোনো পাহাড়িয়া গিঁরিপথ। সতর্কতার সাথে চললাম। যেতে যেতে গল্প, কবিতা আবৃতি করতে করতে আগাতে থাকলাম একে একে রোডের মোড়গুলো। অনেক্ষণ ড্রাইভ করার পর ইচ্ছে হলো এবার কিছু সময় ব্রেক নেওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। কোম্পানীগঞ্জ যাবার পর ছোট্ট একটি টিনের ঘরে এক মুদি দোকানে দাঁড়ালাম। আশ্চর্য! কিছুই যে নেই। শুধু এক কাপ চা আর সঙ্গে একটা বিস্কুট নিলাম। চায়ে চুমুক মেরে কিছুক্ষণ দাড়ালাম। এবার সামনে যাই কেমনে পথ যে আর চিনি না! না দোকানদার চাচ্চুর দেখানো পথ ধরে চললাম আবার হাদারপারের উদ্যেশ্যে। আধাঘণ্টা খানেক পর পৌঁছে গেলাম হাদারপারের নদীঘাটে। এবার নৌকা ছাড়ার পালা। সেখান থেকে নৌকায় চেড়ে নদীর ওপারে পাড়ি দিলাম বাইকসহ আমরা দু’জনে। তারপর সেখান থেকে বিছনাকান্দি গেলাম ১০ মিনিটে।
এ যেন প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমায়। এতো সুন্দর হবে এই জায়গাটি ভাবতেও পারছি না। সেদিনও না আর আজও না। এ যেনো কল্পনাকেও হার মানায়। চোখ জোড়ানো। আকাশের পেটে রচিত এ সুন্দর শিল্পকর্মের আড়ালে আমি যেনো যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, সে মহান শিল্পির সৌন্দর্যের ঝিলিক দেখতে পাই। যে সৌন্দর্য দেখার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে ছোটে এসেছি এখানে। তার এখনো অবসান হয়নি। আর হবেও না। পাহাড়ের কোলঘেসে ঝর্ণাধারা অবিরাম ছোটে চলছে। পানির শাঁ শা আওয়াজ আমায় নিয়ে যাচ্ছে কোন অজানা এক গন্থব্যে। এ যেন জীবনের নবযাত্রায় প্রদীপ্ত কোন আহ্বান। প্রকৃতির আপন লীলায় মেতে আছে ওপার সুন্দর্যের জল পাথরের ভূমি বিছনাকান্দি। সারারাত না ঘুমিয়ে থাকা ক্লান্ত পথিকও এক নিমিষে ভুলে যাবে এখানে তার সব কষ্ট আর গ্লানি। স্বচ্ছ শীতল পানির তলদেশে পাথরের পাশাপাশি নিজের শরীরেরও লোম দেখা যায়। আহ! কী এক অনুভূতি! পানির ঝিলিক আর স্রোত পর্যটকদের মুগ্ধ করছে মুহূর্তে ।
এরকম স্বচ্ছ পানি দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। আমিও গা ভাসিয়ে দিলাম পাথরের উপর, পানির নিচে। খানিকটা পর উঠে তবে কিছু সময় এ পাথর থেকেও গড়ালাম হেলেদুলে। ওই পাথর থেকে সেই পাথর, এভাবে করে হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষণ হাটি, কিছুক্ষণ বসি। লেপ্টে যাই, ব্যথাও পাই। কী আর করা! কিচ্ছু করার নাই। এবার গা এলিয়ে বসে পড়লাম ঝলঝলে পানিতে। মাঝে মধ্যে অবশ্য সেলফি উঠাতে আর সেলফিতে মগ্ন হতে ভুলিনি। আর নোমান তো হরদম সেলফিবাজিতে ব্যস্ত। অপার সৌন্দর্যময় এ পরিবেশ এর সঙ্গে নিজের স্মৃতিটুকু বেঁধে না রাখলে কী হয়? উঠতে মন চাচ্ছে না, তারপরও যে উঠতে হবে। গন্তব্যে ফিরতে হবে। খানিকটা পর মন ভারি করে উঠে গেলাম। ভিজে যাওয়া কাপড়গুলো বদলে মুখ ফিরলাম ইটপাথরালয়ের শহর পানে। আসার সময় ব্যতিক্রম কিছু অভিজ্ঞতা হলো। যাই হোক, শেষ অবধি সন্ধার সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গেলাম শহরে। রাত্র এলে এসব ভাবতে ভাবতেই চলে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here