সংবাদ ডেস্ক :: ‘অগ্রাধিকার প্রকল্পে’ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গা ইস্যুর গুরুত্ব আন্তর্জাতিক মহলে অব্যাহত রাখতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্যই প্রকল্পটিতে আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ২৬ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার চিন্তা করা হচ্ছে।
গেল মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পাস হওয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দের অর্থ ২ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজারে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এরা কবে নাগাদ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ফেরত যেতে পারবে তা, এখনো অনিশ্চত। ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত এ দেশে দীর্ঘমেয়াদি থাকার উপযোগী একটি নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য প্রয়োজন হবে দেশি-বিদেশি অর্থায়ন ও লজিস্টিক সহায়তা। এসব সহায়তা পাবার জন্যই রোহিঙ্গা ইস্যুকে সরকারের অন্যান্য অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় স্থান দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু দিন যত যাবে এই আকর্ষণের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে কমে যেতে থাকবে। তাই আন্তর্জাতিক মনোযোগকে দীর্ঘস্থায়ী করা এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এই ইস্যুকে ‘অগ্রাধিকার প্রকল্পে’ স্থান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে যাতে পর্যাপ্ত বিদেশি আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়, সে দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, এমআরটি-৬ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে আবাসন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলাধীন ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসন ও দ্বীপের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় এই অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গত ২৮ নভেম্বর একনেক বৈঠকে এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ লাখ ৫ হাজার ২০ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রাম, ১ হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউজ, ১২০টি শেল্টার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া উপাসনালয়সহ দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ও বাসভবন নির্মিত হবে। প্রকল্পের নাম আশ্রয়ণ-৩। এটি ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, বিপন্ন রোহিঙ্গাদের বিশাল স্রোত দেশের নিরাপত্তা ও পরিবেশ দুটির জন্যই হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ দেশে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাস করছে। কিন্তু এখন স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত পাহাড়ি জমি ও বনাঞ্চল নষ্ট হচ্ছে। বলপূর্বক এসব রোহিঙ্গাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ভাসানচরের অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, নলকূপ, ওয়াচ টাওয়ার, বেড়া নির্মিত হবে। রোহিঙ্গাদের সুবিধায় একটি মাইক্রোবাস, ১২টি মোটরসাইকেল, ২৩টি হিউম্যান হলার, ৪০টি ঠেলাগাড়ি, ৪৩টি ভ্যানগাড়ি ও আটটি হাইস্পিড বোট কেনা হবে। এ ছাড়া গুদামঘর, ওয়াচ টাওয়ার, জ্বালানি ট্যাংক, হেলিপ্যাড, চ্যানেল মার্কিং, বোট ল্যান্ডিং সাইট, রাডার স্টেশন, সোলার প্যানেল, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন নির্মিত হবে।
… [Trackback]
[…] There you will find 34383 additional Information to that Topic: dailyshongbad.com/2017/12/19/রোহিঙ্গা-ইস্যুর-গুরুত্ব/ […]