সংবাদ ডেস্ক :: গতকাল মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন পবিত্র জুমার নামাজের খুতবায় ইসলাম তথা বিশ্বের প্রধান তিন মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি ও বাইতুল মুকাদ্দাসসহ দেশে দেশে প্রধান মসজিদগুলোতে আল কুদস তথা জেরুজালেম নিয়ে জোরাল খুতবা প্রদান করেছেন খতিবরা। সব মসজিদের খুতবায় কুরআন-হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস তুলে ধরে যেকোনো মূল্যে পবিত্র জেরুজালেম রক্ষার দাবি জানানো হয়। বিশ্ব মুসলিমের একতা ও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের দাবি করা হয়।

.
মক্কার মসজিদে হারামের খুতবায় খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন মুহাম্মদ আলে তালেব বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব মানুষের মধ্য থেকে নবীদের বাছাই করেছেন। তেমনি পৃথিবীর নানা ভূমির মধ্যে কিছু ভূমিকেও বানিয়েছেন পবিত্র, সম্মানিত ও বরকতময়। জেরুজালেমের প্রাণ বাইতুল মুকাদ্দাস ইসলামের তিন সম্মানিত মসজিদের তৃতীয় মসজিদ। এখানে একেকটি নামাজের সওয়াব পাঁচশ গুণ বেশি। এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজের স্মৃতিস্থান। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহ আনহু বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করেন।’

 

‘প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ে ফিলিস্তিন ও আকসা’ শিরোনামের খুতবায় তিনি আরও বলেন, এই পবিত্র ভূমির মতো পৃথিবীর আর কোনো জনপদে এত নবী-রাসূলের কদম পড়েনি। ফিলিস্তিনের প্রতিটি ধুলিকণার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নবীদের স্মৃতি। ফিলিস্তিনের প্রতিটি মুসলিমের দেহে বইছে নবী-রাসূলদের রক্ত। জেরুজালেম কেবল একটি জাতি বা দেশের ইস্যু নয়, এটা পুরো ‍মুসলিম উম্মাহর ইস্যু। কুদস, আকসা আমাদের কাছে আমানত। এর সঙ্গে পুরো উম্মাহর ভাগ্য জড়িত। এই পবিত্র ভূমি রক্ষায় এখন পৃথিবীর সব মুসলমানের একতা প্রয়োজন। এই ইস্যুতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এখন সামাজিক মাধ্যমে বা মিডিয়ায় পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি কাম্য নয়। আল্লাহর দেওয়া কুদস, আকসা ও ফিলিস্তিন আমাদের ছিল এবং আমাদেরই হবে।

 

বাস্পরুদ্ধ কণ্ঠে কাবা শরিফের এই খতিব বলেন, কাবার পর এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম মসজিদ। বনি ইসরাইলদের আগে ও পরে সব সময়ই এটি ছিল এক আল্লাহর ইবাদতের স্থান। এই মসজিদে প্রধান চার আসমানি ধর্মের গ্রন্থই পঠিত হয়েছে। এখানে আমাদের শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ঐতিহাসিক ও মহাঅলৌকিক মিরাজের রাতে সব নবী-রাসূল নামাজ পড়েছেন। এতে করে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে, শেষ নবী আসার পর এই মসজিদটি কেবল এক আল্লাহর ইবাদতকারী মুসলিমদেরই। আগের সব বাতিল। তাই কুদসের প্রকৃত হকদার মুসলমানরাই। এ নিয়ে কোনো টালবাহানা সহ্য করা হবে না। সম্প্রতি জেরুজালেম নিয়ে যে হঠকারী সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে, তা শুধু বেআইনিই নয়, একটি জাতির বিপুল জীবন ক্ষয় ডেকে আনবে। ফিলিস্তিনের পাশে আমরা ছিলাম ও থাকব। আকসা মুসলমানদের ছিল ও থাকবে। ইনশাআল্লাহ আমাদের জয় হবেই। প্রত্যেক মুসলিম শাসকের উচিত, এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া এবং ইস্পাতকঠিন ঐক্যের মাধ্যমে আকসার অধিকার রক্ষা করা।

এদিকে, মসজিদে নববির খুতবায় খতিব শায়খ হুসাইন বিন আবদুল আজিজ আল শায়খ মসজিদে আকসা ও জেরুজালেমের মর্যাদা ও ফজিলত সংক্রান্ত কুরআন-হাদিসের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, জেরুজালেম নিয়ে বিতর্কিত এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সব চুক্তি ও শান্তি প্রক্রিয়া হত্যার শামিল। এখন সময় হয়েছে মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের চেতনায় জাগ্রত হওয়ার।

‘ফিলিস্তিন বিষয়টি ইসলামী’ শিরোনামের খুতবায় তিনি বলেন, ফিলিস্তিন সংকট শুধু রাজনৈতিক বা ভৌগলিক ব্যাপার নয়, এটি নিরেট ধর্মীয় একটি ইস্যু। এ সংকট সমাধানের দায় কোনো মুসলিমই এড়াতে পারে না। আমাদের সবার নিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করতে হবে, সব সমস্যা নিরসনে আগে দরকার খাঁটি ঈমান ও তাওহিদের অবিনাশী চেতনা। প্রকৃত ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমেই সব সংকটের উত্তরণ ঘটবে। মুসলিম নেতাদের এখন বুদ্ধিদীপ্ত ও ঐক্যবদ্ধ কৌশল গ্রহণ করতে হবে। প্রজ্ঞা ও ঈমানদীপ্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

নিজ দেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ দেশ এবং এর শাসকদের অবস্থান সব সময় ফিলিস্তিনের সঙ্গে। এ দৃঢ় সম্পর্ক কখনো নড়চড় হবে না। এ দেশের অগ্রাধিকারে সর্বদাই ছিল ফিলিস্তিনি জাতিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা।

জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাস বা আকসা মসজিদের খতিব শায়খ ইউসুফ আবু সিনিনাহ তার খুতবায় বলেন, আমরা কুদসবাসী এবং পুরো মুসলিম উম্মাহ আজ ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে ভীষণ ক্ষুব্ধ। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অবৈধ এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, জেরুজালেম আরবদের, ফিলিস্তিনিদের এবং ইসলামের একটি পবিত্র শহর। তিনি সাবধান করে বলেন, মার্কিন সিদ্ধান্ত আমাদের জাতির শক্তি, বিশ্বাস ও ঈমান আরও বৃদ্ধি করবে।

তিনি আদ ও সামুদ জাতির করুণ পরিণতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, এখানকার জালিমদের পরিণতিও একই রকম হবে। তিনি আরও দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা চূড়ান্ত সত্য। তিনি পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘দেশে যাদেরকে দুর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হলো তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here