সংবাদ ডেস্ক :: জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে। মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে এ রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। কাউন্সিলের সদস্য ৪৭টি দেশের মধ্যে ৩৩টি বাংলাদেশের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। চীনসহ তিনটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। আর ভারতসহ ৯টি দেশ কোনো পক্ষ নেয়নি। ৪৭টি সদস্য দে‌শের ম‌ধ্যে বি‌শেষ অধি‌বেশ‌নে ৪৫টি অংশ নেয়।
.
অবশ্য অধিবেশনে রেজ্যুলেশনটি উত্থাপনের পর চীন ভোটাভুটিতে দেওয়ার আহ্বান জানায়।

এর আগে অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন বলেন, রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে হয়তো দোষী করা যেতে পারে। খবর: রয়টার্স, বিবিসি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

গত আগস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর ৬ লাখ ২৬ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত আছে। মিয়ানমার মুখে বললেও এখন পর্যন্ত এ ঘটনা তদন্তের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের প্রস্তাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এই বিশেষ অধিবেশন বসে। এতে বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ ৪৫টি দেশ অংশ নেয়।

অধিবেশনে জেইদ রাদ আল হুসেইন রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের বিভিন্ন প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি করা একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান।

তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর অত্যাচারের বর্ণনা দেওয়া আছে। যার মধ্যে লোকজনকে জোর করে তাদের বাড়ির মধ্যে আটকে রেখে আগুনে পুড়িয়ে মারা, নির্বিচারে হত্যা, পালাতে থাকা বেসামরিক মানুষদের ওপর গুলি, নারী ও মেয়ে শিশুদের গণহারে ধর্ষণ এবং বাড়ি, স্কুল, বাজার ও মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়া বা ধ্বংস করার কথা আছে।’

৪৭টি সদস্য দেশের পরিষদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘গণহত্যা প্রমাণের জন্য এখানে সম্ভাব্য যে সব উপাদানের কথা উল্লেখ আছে, তা কি আপনারা কেউ উড়িয়ে দিতে পারবেন?’

এর পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে অপরাধ তদন্তের ব্যবস্থা চালুর জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদকে অনুরোধ জানানোরও আহ্বান জানান জেইদ রাদ আল হুসেইন।

এর আগে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল’ বলে বর্ণনা করে আসছিল। এই প্রথম জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কোনো কর্মকর্তা ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা’ শব্দটি উচ্চারণ করলেন।

ফলে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ল এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দীর্ঘদিনের নিপীড়ন-সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগটিও প্রকাশ পেল।

রাখাইনের প্রকৃত অবস্থা সেখানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করার আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেখানে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন জেইদ রাদ আল হুসেইন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রোহিঙ্গাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্বিক, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সত্তার কথা ভাবি এবং যারা সহিংসতা ঘটাচ্ছে তাদের আলাদা সত্তার কথা মনে রাখি, তাহলে গণহত্যা যে ঘটে থাকতে পারে তা উড়িয়ে দেওয়া চলে না। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে একই রকম হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো ভয়াবহ বর্বরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।’

অবশ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমারের প্রতিনিধি বলেছেন, এই সহিংসতা মিয়ানমারর সরকারের নীতি নয় বরং চরমপন্থীরা এসব ঘটাচ্ছে এবং তাদের ঠেকাতে সরকার সবকিছুই করছে।

তিনি আরো জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে কাজ করছে তার দেশ। তবে ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা কোনো শরণার্থী শিবির তৈরি করা হবে না।

এ বিষয়ে জেইদ রাদ আল হুসেইনি বলেন, ‘বৈষম্য ও সহিংসতা অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিতভাবেই আরো দুর্ভোগের শিকার হতে হবে।’

এ অধিবেশনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মঙ্গলবার তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন অধিবেশনে খুবই যথাযথ বক্তব্য দিয়েছেন। এ পর্যন্ত নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন এবং বাংলাদেশের পাশে থাকবেন।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here