সুলায়মান আল মাহমুদঃ আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে জোর তৎপরতায় নেমেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। শুধু মেয়র নয়, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। সিটির সর্বত্র যেন একটা নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠান-সর্বত্রই নির্বাচনী আলোচনা। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে পোষ্টার সহ নানা পোষ্ট দিচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ তো এখন থেকেই নেমে গেছেন প্রচারণায়। নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরতে তাদের প্রানান্তকর চেষ্টা ভোটারদের মাঝে প্রানচাঞ্চল্য ফিরিয়ে দিয়েছে।
জানা যায়, সিলেট সিটি নির্বাচনে এবার মেয়র পদের প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন। তাই তাদেরকে ভোটের আগে দলীয় মনোনয়ন পেতে নামতে হচ্ছে আরেক ভোটে । মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে দলীয় মনোনয়ন পেতে হবে তাদের।
বিশেষ করে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মেয়র পদ নিয়ে শুরু হয়েছে স্নায়িযুদ্ধ। বড় দুই দলেরই সিলেটের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় ইতিমধ্যে তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে অন্যরকম লড়াই। প্রত্যেকেই নিজেকে দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য নিজের যোগ্যতা জাহির করতে নিয়েছে বিভিন্ন পন্থা। কেন্দ্রীয় লবিং-এর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন সব প্রার্থীই। তবে পিছিয়ে নেই ছোট দলগুলোও। তারাও তাদের পক্ষে চালাচ্ছেন সরব প্রচারণা। নিবন্ধন বাতিল হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামী মেয়র পদে প্রার্থী করতে সরব প্রচারণায় মেতে উঠেছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এবং খেলাফত মজলিসও মেয়র পদে প্রার্থী দিচ্ছে এমনটা শোনা যাচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেতে অন্তত চার জন প্রার্থী মাঠে প্রচারনা চালাচ্ছেন। তারা হলেন- সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদ ও আওয়ামী ঘরানার বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক মাহী উদ্দিন আহমদ সেলিম। বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও মহানগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, মহানগর সহ-সভাপতি সিসিক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে মহানগর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, খেলাফত মজলিস থেকে মহানগর সাধারণ সম্পাদক কেএম আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং জাতীয় পার্টি থেকে আব্দুস সামাদ নজরুল মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুই বারের মেয়র, সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আসন্ন নির্বাচনে আবার প্রার্থীতার জন্য তৎপর রয়েছেন। তিনি প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় কর্মকান্ড ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সব সময় যোগদানের মাধ্যমে নিজের সরব উপস্থিতির জানান দিয়ে যাচ্ছেন।দলীয় প্রধানের নির্দেশেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশেই তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটের সর্বস্থরের নেতাকর্মী ও নগরবাসীর সমর্থন আমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহনে উদ্ভুদ্ধ করছে। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই তিনি মেনে নেবেন। পিছিয়ে নেই মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ । তিনিও সর্বত্র প্রচারণায় চালিয়ে যাচ্ছেন । একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে রাজনৈতিক মহলে তার পরিচিতি রয়েছে । আওয়ামীলীগের একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে । নগরবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বানেই প্রার্থী হচ্ছেন উল্লেখ করে
আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, নগরবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেই মেয়র পদে নির্বাচন করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । ভোটাররা বিভিন্ন কারনে পুরনোদের উপর বিরক্ত। তাই সময়ের অপরিহার্য দাবী প্রেক্ষিতে নতুন ও যোগ্য প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দিবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। নির্বাচনী মাঠে স্বরব রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদ এবং ক্রীড়া সংগঠক মাহি উদ্দিন সেলিম। তারাও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন ।
এদিকে, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও সিসিক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। নগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরিফের গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা থাকলেও নিজ দলের কাছে গ্রহনযোগ্য বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান তারা । অধিকাংশ সময় কারাগারে থাকায় এবং দলীয় কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের । নির্বাচনে তার অবস্থান জানতে আরিফুল হক চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার রিং দেওয়ার পরও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়ে আলোচনার শীর্ষে এখন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শীর্ষে রয়েছেন বদরুজ্জামান সেলিম। পিছিয়ে নেই মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সহ-সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীও। নাসিম হোসাইন প্রার্থীতা ঘোষনা না করলেও মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এব্যাপারে বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি ও নগরবাসীর প্রত্যাশা-সমর্থন পেয়েই তিনি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এব্যাপারে দলের হাইকমান্ডেরও সবুজ সংকেত রয়েছে। তিনি আশাবাদী, হাই-কমান্ড এবং স্থানীয় নেতাকর্মী তার পক্ষেই রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের ভোটে তিনি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছেন। নেতাকর্মী ও নগরবাসী সকলেই তাকে প্রার্থী হতে বলছেন। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনা করে তিনি বলেন- দল যে আশায় তাকে মেয়র নির্বাচিত করেছিলো তা গুড়েবালিতে পরিনত হয়েছে। তিনি দলীয় প্রার্থী হয়েও নির্দলীয় থাকার চেষ্টা করে দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে দুরে সরে গেছেন। আলোচনার রয়েছেন রেজাউল হাসান কয়েস লোদী । দলীয় ফোরাম ছাড়াও সামাজিক, ক্রীড়া জগতে কয়েস লোদীর রয়েছে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা । এই যোগ্যতাকে পুজি করেই তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রের সাথে জোর লবিং এর পাশাপাশি তৃনমুল নেতাকর্মীদের সমর্থন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। জণগনের ভালবাসা ও নগরবাসীর প্রত্যাশা পুরণে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়ে টানা ১৫ বছর স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন । তিনি সাবেক মহানগর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। বিগত সিটি নির্বাচনে তিনি প্রার্থীতা ঘোষনা করেও কেন্দ্রীয় নির্দেশে আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে কাউন্সিলার পদেই নির্বাচন করে বিজয়ী হন। কিন্তু বর্তমান মেয়রের ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের পদে বসতে পারেন নি বলে জানান তিনি । তাই আগামীতে প্রার্থী হতে তিনি হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়েও সরব রয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল হলেও মাঠ পর্যায়ে হাল ছাড়েনি দলের নেতাকর্মীরা। আসন্ন সিসিক নির্বাচনে জামায়াতের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সিলেট মহানগরীর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দেখতে প্রচারণা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরে নেতাকর্মীরা। অপরদিকে, সংসদের বিরোধী হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে তেমন কারো নাম আলোচনায় না থাকলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয়পার্টি থেকে প্রার্থী হতে পারেন সাবেক কমিশনার আব্দুস সামাদ নজরুল কিংবা অন্য কেউ। খেলাফত মজলিসও সিলেট সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে নিজ দল থেকে প্রার্থীতা ঘোষনা করেছে । দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক কেএম আব্দুল্লাহ আল মামুনকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য-সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এমএ হককে পরাজিত করে মেয়র পদে জয়ী হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে কারাগারে বন্দি থেকেও বিপুল ভোটে পুণরায় বিজয়ী হন কামরান। তবে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত কামরান।
… [Trackback]
[…] Read More Info here on that Topic: dailyshongbad.com/2017/11/26/সিসিক-নির্বাচনে-সরব-যারা/ […]