সংবাদ ডেস্ক :: :: নবান্ন উৎসব মানে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে সবুজের ফাঁকে ফাঁকে সোনালী ধানের উঁকি, হলুদের প্রশস্ত আবরণ, কৃষকের স্বস্তিভরা মুখে অম্লান হাসি, কৃষাণির উচ্ছ্বাস আর পিঠা-পুলির সম্ভার।

এসবের কোনো কিছুই নেই মৌলভীবাজারের হাওরপাড়ের কৃষকদের জীবনে। বন্যার পানি না নামায় আমন চাষে ব্যাঘাত ঘটায় আশানুরূপ ফলন পাননি তারা, ধান কাটার বর্তমান মাহেন্দ্রক্ষণেও সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।

শেষ অবলম্বন হিসেবে বোরো ধান নিয়ে ব্যস্ত হলেও হাওরের পানিতে তাও নষ্ট হওয়ার আতঙ্কে আছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চলতি মৌসুমে ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও বন্যার পানি তাতে ব্যাঘাত ঘটায়। পরে এক থেকে দুই ফুট পানিতেই আমন রোপণে বাধ্য হয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু ধানে তোড় এলেও পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে হাওরের অধিকাংশ কৃষকই আমন ধান ঘরে তুলতে পারেননি এবার।

অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, শেষ পর্যন্ত ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করতে পেরেছিলেন চাষিরা। কিন্তু এ পর্যন্ত তার মাত্র ২৪ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন তারা। পানি এখনো থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।

সরেজমিনে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের মাঝে ধান কাটার কোনো আমেজই নেই। জমিতে রোপিত আমন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কোথাও শীষ দাঁড়িয়ে থাকলেও ধান নেই, আবার কোথাও পানিতে ছড়া পচে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এসব ধান অসহায় অবস্থায় ঘরে নিচ্ছেন কৃষকরা। কেউ কেউ অভিমানে ক্ষেতের ধারে কাছেও যাচ্ছেন না।

এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি পাড়ের কৃষকেরা জানান, প্রতি বছর একটু-আধটু আমনের চাষ করতে পারলেও এবার তাও সম্ভব হয়নি। বীজতলা করে সেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। পানি না নামায় ধান রোপণই করতে পারেননি অধিকাংশ চাষি।

সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা আমাদের এলাকার কৃষকদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। বছরের এ সময়টাতে কৃষকদের হাসি-আনন্দে থাকার কথা। কিন্তু আমনের চাষ সম্ভব না হওয়ায় আহার যোগাতেও পারছেন না অনেক কৃষক পরিবার। নবান্ন উৎসবের কোনো ছোঁয়াই নেই এখানে’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here