সংবাদ ডেস্ক :: চলতি বছর বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় ছিল ৬৩৫টি হজ এজেন্সি। এরমধ্যে ২২৮টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভিসা ও পাসপোর্ট হাতে থাকার পরেও এজেন্সির গাফিলতিতে বহু হজযাত্রী যথাসময়ে হজে যেতে পারেননি।
টাকা নিয়েও অনেককে মানসম্মত ট্রলিব্যাগ দেয়া হয়নি। এছাড়া সৌদি আরবে চুক্তিহীন বাড়িতে রাখা ও নিন্মমানের খাবার দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (হজ) হাফিজ উদ্দিন। অন্য সদস্যরা হলেন- পরিচালক (হজ) সাইফুল ইসলাম ও উপ-সচিব (হজ) শরাফত জামান।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) মো. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত দ্বিতীয় কমিটির সদস্যরা হলেন- উপ-সচিব (বাজেট) জহির আহমেদ ও সহকারী সচিব (হজ-২) এসএম মনিরুজ্জামান। এ দুটি কমিটি ৭৫টি করে এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করবে।
যুগ্ম-সচিব (সংস্থা) এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর নেতৃত্বে গঠিত অন্য কমিটির সদস্যরা হলেন- উপ-সচিব (প্রশাসন) একেএম শহীদুল্লাহ, উপ-সচিব (উন্নয়ন) সাখাওয়াত হোসেন ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন। এ কমিটি ৭৮টি এজেন্সির অনিয়ম খতিয়ে দেখবে।
এই তিন কমিটিকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
তবে এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে না বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হাফিজ উদ্দিন আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি খুব তাড়াতাড়ি প্রতিবেদন জমা দেয়ার। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ নাও হতে পারে। শেষ না হলে আমরা অতিরিক্ত সময়ের আবেদন করব।’
চলতি বছর বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল ৬৩৫টি হজ এজেন্সি। এরমধ্যে ২২৮টি এজেন্সির বিরুদ্ধেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
কিছু এজেন্সির গাফিলতির কারণে ভিসা ও পাসপোর্ট থাকার পরও যথাসময়ে হজে যেতে পারেননি অনেকে। ভিসা জটিলতায় যাত্রী সংকটে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স মোট ২৮টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আর বাকি ৪টি সৌদি এয়ারলাইন্সের।
এজেন্সির প্রতারণার কারণে টাকা জমা দিয়েও কয়েকশ’ বাংলাদেশি হাজি চলতি বছর হজে যেতে পারেননি।
কিছু এজেন্সি শুধু দেশেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করে ক্ষান্ত থাকেনি, তারা সৌদি আরবেও ব্যাপক অনিয়ম করেছে বলে সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশনে কয়েকশ’ অভিযোগ জমা পড়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে সেগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, অভিযোগের বেশির ভাগই ট্রলিব্যাগ নিয়ে। নিন্মমানের ও বিলম্বে ব্যাগ সরবরাহের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হন হজযাত্রীরা। অথচ হজ প্যাকেজে ট্রলিব্যাগের জন্য ২৫০০ টাকা করে নেয়া হয়।
বেসরকারি হজযাত্রীদের ব্যাগ সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয় হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (হাব)। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাজিদের ব্যাগ দেয় মন্ত্রণালয়। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাগ সরবরাহে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হাফিজ উদ্দিন আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আসলে অভিযোগ তো নির্দিষ্ট না। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। তদন্ত কাজ শেষ হলে হয়তো বলা যাবে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষী এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় কেউ কেউ ব্যাগ না পেয়ে নিজস্ব ব্যাগ নিয়ে হজে গেছেন। আর যারা ব্যাগ পেয়েছেন সেটিও (দাম ৮০০-১০০০ টাকা) নিন্মমানের।
একই অবস্থা বেসরকারি হাজীদের ক্ষেত্রেও। কোনো এজেন্সির যাত্রী সংখ্যা ২০০ হলেও এজেন্সিটি মাত্র ২৫টি ব্যাগ কিনেছে। বাকিদের ব্যাগ দেয়া হয়নি। অথচ ২৫টি ব্যাগ দেখিয়ে হাব অফিস থেকে ২০০ জনের টাকা তুলে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি।
হজ এজেন্সির অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে সব অভিযোগ সত্য নয়। অভিযুক্ত হজ এজেন্সিগুলোকে হাব কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।’