সংবাদ ডেস্ক :: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) ও সমমানের ইবতেদায়ী পরীক্ষায় প্রতি বছরই পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু এবার ছন্দপতন ঘটতে যাচ্ছে। এ বছর গতবারের তুলনায় সোয়া এক লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কমে গেছে কোমলমতি শিশুদের এ পাবলিক পরীক্ষায়।
এবারের পিএসসি-ইবতেদায়ী পরীক্ষা নিয়ে আজ (বুধবার) সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন তিনি।
এবারের পিএসসি-ইবতেদায়ী পরীক্ষায় সারাদেশে মোট ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫ জন শিশু অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে প্রাথমিকে ২৮ লাখ চার হাজার ৫০৯ জন এবং ইবতেদায়ীতে দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৫৬ জন
জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণিতে পিএসসি-ইবতেদায়ী পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর পর প্রতি বছর বেড়েছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। তবে এবার এর ব্যত্যয় ঘটেছে। কমে গেছে ২০১৬ সালের তুলনায় সোয়া এক লাখ শিশু।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানায়, আগামী রোববার ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে এবারের পিএসসি-ইবতেদায়ী পরীক্ষা। এতে সারাদেশে মোট ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫ শিশু অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে প্রাথমিকে ২৮ লাখ চার হাজার ৫০৯ জন এবং ইবতেদায়ীতে দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৫৬ শিশু।
ডিপিই’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের চেয়ে এবার এক লাখ ২৮ হাজার ২২৩ পরীক্ষার্থী কম। গত বছর ৩২ লাখ ২৪ হাজার ২৮৮ শিশু পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৩ এবং ইবতেদায়ীতে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ শিশু। আগের বছর ২০১৫ সালে উভয় পরীক্ষায় ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৪ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছিল।
সূত্র আরো জানায়, এবার সারাদেশে সাত হাজার ২৬৭টি এবং বিদেশে ১২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৪০৪টি কেন্দ্র দুর্গম এলাকায়। গত বছর সারাদেশে সাত হাজার ১৮১টি এবং বিদেশে ১১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে এবার কেন্দ্র বেড়েছে ৮৭টি। কিন্তু আনুপাতিক হারে পরীক্ষার্থী বাড়েনি।
কয়েক বছর ধরে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অনেক কমেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার কারণে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে। এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই
পরীক্ষার্থী কমার কারণ জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কয়েক বছর ধরে কম। আগামীতে এ হার আরো কমবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার কারণে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা কার্যক্রম তদারকি, সমন্বয় ও মনিটরিংয়ের জন্য আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলায় মন্ত্রণালয়ের ৩৮ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদিরকে ঢাকা ও রংপুর বিভাগে, মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে খুলনায়, মো. আকরাম-আল-হোসেনকে বরিশালে, হোসেন আরকে ময়মনসিংহে, যুগ্ম সচিব শেখ আতাহার হোসেনকে চট্টগ্রামে ও পুলক রঞ্জনকে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য শুরুর দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিপিই, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, জেলা ও উপজেলায় একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে। এছাড়া ডিপিই’র আলাদা মনিটরিং টিম-তো রয়েছে।
ডিপিই সূত্র আরো জানায়, বিগত দিনে অনেক কঠিন প্রশ্ন করা হতো। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীরদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতো। এতে কোচিং এবং গাইড বইয়ের প্রতি তারা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে সহজে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সে বিবেচনায় এবার পরীক্ষার্থীর বয়স ও মেধা বিবেচনা করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছ। উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে এবার এক জেলার পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র অন্য জেলার শিক্ষদের দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে কোড নম্বরের মাধ্যমে ডিপিই সার্ভারে পাঠাতে হবে।
এছাড়া উত্তরপত্রের মূল্যায়নে অনিয়ম হলে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অভিযুক্তদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, এবার পিএসসি-ইবতেদায়ীতে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় মোট ৮২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হবে। তাদের মধ্যে পিএসসিতে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হবে। এছাড়া ইবতেদায়ীতে ট্যালেন্টপুলে সাত হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী ও সাধারণ কোটায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হবে। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ৩০০ টাকা ও সাধারণ কোটায় বৃত্তিপ্রাপ্তরা ২২৫ টাকা ভাতা পাবে।