সংবাদ ডেস্ক :  আশুগঞ্জ-ভৈরব মেঘনা নদীর উপর নির্মিত দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর উপর নির্মিত ২য় তিতাস রেলসেতুর উদ্বোধন হচ্ছে বৃহস্পতিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দুটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে ২য় ভৈরব সেতুর ভৈরব প্রান্তে মেঘনা নদীর পাড়ে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) অর্থায়নে প্রায় ৭৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ও বাংলাদেশ রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে এই দুইটি রেলসেতুর নির্মাণ কাজ গত জুন মাসেই শেষ করা হয়। সেতু দুটির উদ্বোধন উপলক্ষে মেঘনার দুপাড় আশুগঞ্জ ও ভৈরবে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
প্রকল্প সূত্র মতে, প্রায় ৯৮২ দশমিক ২ মিটার দীর্ঘ এই রেল সেতুটির লোডিং ক্যাপাসিটি পূর্বের সেতুর চেয়ে দ্বিগুন। এতে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ ট্রেন চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে এটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেমন ২ ঘণ্টা সময় কম লাগবে তেমনি রেলভ্রমণ হবে দ্রুত ও নিরাপদ। তাছাড়া অধিক ওজনের ট্রেন চলাচলের সুযোগ থাকায় পণ্য পরিবহন হবে সহজ ও নিরাপদ। সেতুটির বিশেষ দিক হচ্ছে দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ১২০ মিটার স্পেন সংযোজন করা হয়েছে। সেতু দুটির নির্মাণ কাজ শেষে এই রেলসেতুর উপর দিয়ে একাধীকবার পরীক্ষামূলকভাবে ৭৫কি মি গতিবেগে ইঞ্জিনসহ ট্রায়াল ট্রেন ও গ্যাংকার ট্রেন চালানো হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন সেতু অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়। বর্তমানে এই দুটি সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-আখাউড়া ডাবল লাইনে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করছে।
১৯৭৭ সালের পরে এই প্রথম মেঘনা নদীতে এই রেলসেতু হয়েছে। এ উপলক্ষে দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুর ভৈরব প্রান্তে মেঘনা নদীর পাড়ে রেলওয়ে বিভাগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে রেলমন্ত্রী মো. মজিবুল হক, রেলপথ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনার ড. আদর্শ সোয়ায়িকা ও সেতু ২টির প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করবেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে সেতু দুটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হবেন।
রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের জন্য অন্যতম ও সহজ মাধ্যম ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। তাই বর্তমান সরকার এই রেলপথ ডাবল/ডুয়েল গেজে রূপান্তরের এক মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়।ইতোমধ্যে টঙ্গী-ভৈরব, চট্টগ্রাম-লাকসাম অংশের ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাতশালা পর্যন্ত ডাবল লাইন আগে থেকেই ছিল।
কিন্ত আশুগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে যাত্রাপুর পর্যন্ত এক কিলোমিটার রেললাইন, মেঘনা নদীর উপর দ্বিতীয় রেলসেতু ও ভাতশালা স্টেশনের কাছে তিতাস নদীর উপর দ্বিতীয় রেলসেতু না থাকায় এতোদিন ভৈরব থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইনে বিরতিহীন ভাবে ট্রেন চলাচল চালু করা সম্ভব হয়নি।
ভৈরব-আখাউড়া ডাবল লাইন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ-ভৈরব সীমানায় মেঘনা নদীর উপর ২য় ভৈরব রেলসেতু, তিতাস নদীর উপর দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুসহ আরো কিছু আনুসঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ কাজ করা হয়। এই ২টি সেতু বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৭৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যার সিংহ ভাগ ভারতীয় ঋণ সহায়তার (এলওসি) আওতাভুক্ত।
চুক্তি অনুসারে ভারতীয় জয়েন্টভেঞ্চার ইরকন-এফকনস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৩ সানের ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শুরু করে। নানান জটিলতার কারণে ২দফা সময় বাড়িয়ে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর পর চলতি বছরের জুন মাসে সেতুর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে এক বছর অতিরিক্ত সময় লাগলেও প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়নি। বর্তমানে দ্বিতীয় ভৈরব সেতু প্রকল্পের সাথে সেতুর দুই পাশে প্রায় এক কিলোমিটার এপ্রোচ রোড, দুই পাশের ৪টি ছোট সেতুর কাজ, তিতাস নদীর উপর দ্বিতীয় রেলসেতুর ও ভৈরব-আখাউড়া ডাবল লাইনের বাকী অংশের কাজও শেষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের যাবতীয় নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সেতুটি উদ্বোধনের পর ট্রেন চলাচল শুরু করা হলেও চুক্তি অনুসারে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক বছর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় মেরামত ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করার কথা রয়েছে।
এব্যাপারে দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুর প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন-এফকন্স জয়েন্টভেঞ্চারের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অমিয়াংশ দাস জানান, গত জুন মাসের মধ্যে সেতুর কাজ করে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনও চালানো হয়েছে। ভৈরব ও তিতাস সেতু ছাড়াও মাইনর রেলসেতু রয়েছে ৮টি।
দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই জানান, সেতুর ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডগেজ ও ডুয়েল গেজ লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এখন থেকে ঢাকাগামী সকল ট্রেন এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু ও ২য় তিতাস সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয় আশুগঞ্জ-ভৈরব রেল সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সকল ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে ট্রেন চলাচলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তিনি আরো জানান, পূর্বের সেতু দিয়ে ১১-১২টন ওজনের ট্রেন চলাচল করলেও এ সেতু দিয়ে ২৫টন ওজনের ট্রেন চলাচল করতে পারবে, থাকবে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ লাইন সুবিধা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভ্রমণ ও পণ্য পরিবহনে সময় যেমন অপেক্ষাকৃত কম লাগবে তেমনি তা হবে সহজ ও সাশ্রয়ী। এ পথে ট্রেন চলাচলে সময় অন্তত দেড়ঘণ্টা সময় কমে আসবে। ফলে রেলপথে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here