মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি রাখাইনের মংড়ু  সফরে গিয়ে মুসলিমদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত ২৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর নিপীড়নে ৬ লাখ মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পরে প্রথমবারের মত রাখাইন সফরে গিয়ে সু চি এ কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়নকে জাতিসংঘ জাতিগত নিধনযজ্ঞ অভিহিত করলেও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অং সান সু চি এর বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে পারেননি। এজন্য আন্তর্জাতিক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়  মিয়ানমারের নেত্রীকে।
বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে থেকে সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মংড়ুতে যান। রোহিঙ্গা সূত্রের বরাতে আরাকান প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপের ক্রিস লেওয়া বলেন, সু চি সেখানে মুসলিম নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে উপস্থিত এক নেতার বরাতে ক্রিস লেওয়া বলেছেন, তিনি সেখানে তিনটি জিনিস মেনে চলতে বলেছেন। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে থাকা উচিত সরকার তাদের সহায়তা করবে। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করা উচিত হবে না।
সু চির রাখাইন সফরের আগের দিনও সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে। রয়টার্সের ফটোগ্রাফাররা জানিয়েছেন, হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর মোহাম্মদ ইকবাল রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শুধু বুধবার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
২০১৫ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা আরোহণের পরে এই প্রথম রাখাইন সফরে আসলেন সু চি। সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল মুসলিমরা। মংড়ুতে সু চির সঙ্গে দুটি সামরিক হেলিকপ্টারে ২০ জন এসেছেন। মিয়ানমার সামরিক জান্তার সঙ্গে যোগাযোগের কারণে মার্কিন রাজস্ব বিভাগ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী জাও জাও শান্তিতে নোবেলজয়ীর সঙ্গে ছিলেন। cসু চি রাখাইনে শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছে। সু চির পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া যেসব রোহিঙ্গা প্রমাণ করতে পারবে যে তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
এই ফিরিয়ে আসার প্রক্রিয়া আরো জটিল হয়ে এসেছে কারণ রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন নাগরিকত্ব বঞ্চিত রেখেছে মিয়ানমার। সু চির মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেন, বাংলাদেশ ইচ্ছে করে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে যাতে লাখ লাখ ডলার দাতব্য সাহায্য নিতে পারে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বক্তব্যকে ‘জঘন্য’ বলে অভিহিত করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা ভলকার তুর্ক দুই দিনের মিয়ানমার সফর শেষে বৃহস্পতিবার শরণার্থীদের ঐচ্ছিক, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। কিন্তু বুধবার ঝুঁকি নিয়ে নাফ নদী পার হওয়ার দৃশ্যে এটা বলা যায়, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে প্রাণভয়ে বাঁচার চেয়ে বাংলাদেশে জীর্ণদশায় শরণার্থী শিবিরে থাকতে আগ্রহী। রয়টার্স।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here