ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচি শেষে মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরার পথে তার গাড়িবহরে হামলার ঘোষণা নিজাম হাজারীর পক্ষে থেকে আগেই দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন জয়নাল হাজারী।
জয়নাল হাজারীর স্থানীয় দৈনিক হাজারিকা প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘দুই নেত্রী এখনো ক্লান্ত’ শিরোনামে একটি কলামে জয়নাল হাজারী এই দাবি করেন।
তিনি সুস্পষ্টভাবেই লিখেছেন, ফেনীর বিনা ভোটের এমপি যখন ঘোষণা দিয়েছে খালেদা জিয়া মঙ্গলবার ফেরার পথে আবারও আক্রামণ করা হবে, তখন কিন্তু খালেদা জিয়া মোটেই বিচলিত হননি। অবশ্যই তিনি ফিরতি পথে বিমানে আসতে পারতেন কিন্তু তাতে তিনি ভয় পেয়েছেন এমন একটি ধারণা অনেকের মধ্যে জন্ম নিত।
এর আগে গত শনিবার কক্সবাজার যাওয়ার পথে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপের মধ্যেই চাঞ্চল্যকর প্রমাণ উপস্থাপন করে এ হামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে দাবি করে একই পত্রিকায় কলাম লিখেন আওয়ামী লীগের এই সাবেক সংসদ সদস্য।
একই পত্রিকায় ‘কাদের সাহেব, প্রমাণ চান? তাহলে নিজামের ভিডিওটি দেখুন’ শিরোনামে কলামে জয়নাল হাজারী
স্পষ্টভাবেই লিখেন, এ হামলার পেছনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে।
ওই কলামের সঙ্গে একটি ভিডিও যুক্ত করে দেন জয়নাল হাজারী। ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার হাজারিকা প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে ‘দুই নেত্রী এখনো ক্লান্ত’ শিরোনামে প্রকাশিত জয়নাল হাজারীর কলামটি নিম্নে আরটিএনএনের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
জয়নাল হাজারী॥ দেশবাসী নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন দুই নেত্রীর কথাবার্তা অনেকটাই কমে গেছে। এটার কারণ দুজনই এই মূহুর্তে খুবই ক্লান্ত। দুজনারই বয়স ৭০ এর কোঠা পেরিয়েছে। প্রচার আছে দুজনই স্বল্পমাত্রার ডায়বেটিসেও ভুগছেন। খালেদা জিয়া এই বয়সে লন্ডন থেকে আসতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। লন্ডনে অনেকটাই আনন্দে ছিলেন। সেখানে চিকিৎসাও হয়েছে, ছেলেটাও পাশে ছিল, দলীয় লোকজনও পাশে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করত।
তাই সঠিকভাবে বলা হচ্ছে আনন্দ থেকে কর্ম উদ্ধাম বেড়েছে। দেশে এসে লোক সমাগম দেখে আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছেন। সরকার বিমানবন্দরে তার সমাবেশে একেবারেই কোন প্রকার বাধা বিপত্তি করেন নাই। সরকার বাধা দেবে না এমন একটি প্রচার আগে থেকেই ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল।
খালেদা জিয়া দেশে এসেই এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলেন রোহিঙ্গাদের দেখতে যাবেন। লম্বা এই জার্নি শক্তসবল পুরুষ মানুষের পক্ষেও কষ্টকর সেজন্য এই সফরের পর পরই তিনি খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রথম দিকে নেতাকর্মীদের সাথেও খুব একটা দেখা করেন নি। ফেনীতে তার বহরের উপরে যে হামলা হয়েছে তাতেও আগের মত তিনি খুব কড়া ভাষায় তাৎক্ষণিক কিছু বলেন নি।
ফেনীর বিনা ভোটের এমপি যখন ঘোষণা দিয়েছে খালেদা জিয়া মঙ্গলবার ফেরার পথে আবারও আক্রামণ করা হবে, তখন কিন্তু খালেদা জিয়া মোটেই বিচলিত হননি। অবশ্যই তিনি ফিরতি পথে বিমানে আসতে পারতেন কিন্তু তাতে তিনি ভয় পেয়েছেন এমন একটি ধারণা অনেকের মধ্যে জন্ম নিত।
ফেরার পথে ওনার বহর পার হবার পর খালেদা জিয়ার কর্মীরা ব্যাপক ভাংচুর করেছে এবং বিশাল শোডাউন হয়েছিল। বিএনপির কর্মীদের উত্তেজনার মুখে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত পুলিশ সেদিকে আগাতেই পারেনি। মরা বিএনপি হঠাৎ যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। বিএনপি ফেনীতে কিছু করতে পারবে এমনটা মানুষ ভুলেই গিয়েছিল কিন্তু মঙ্গলবারের তাণ্ডব দেখে সকলেই বিস্মিত হয়েছে। বিগত পাঁচ-সাত বছর বিএনপির কোন কর্মসূচী ফেনীতে পালিত হয় না। বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে বক্তৃতায় বলেছে ফেনী এখন শান্তির নগরী এখানে কোন খুন-খারাবি নাই। আমরা সরকার বিরোধী দল কাদে কাধ মিলিয়ে কাজ করি। অথচ প্রতিনিয়ত বিএনপি কর্মীরা হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছিল।
বিএনপি নেত্রী ঢাকা পৌঁছেই শক্ত কিছু প্রতিক্রিয়া দেবেন এমনটাই সকলের প্রত্যাশা ছিল কিন্তু আগের মত উত্তেজিত হয়ে কোন কথা বলেন নাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি খুবই ক্লান্ত। তাছাড়াও কোন কঠোর কর্মসূচী দিয়ে এই মুহুর্তে সংঘর্ষে যেতে চাচ্ছেন না। তবে ফিরতি পথে বিএনপির তৎপরতা দেখে খুবই আশাবাদী হয়েছেন। মুহুরীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদ আলী বাজার পর্যন্ত ৫০০ মোটরসাইকেল তাকে নিরাপত্তা দিয়েছে। এ সময় সেন্ডিকেট ক্যাডাররা অনেকেই শহরের উত্তর পূর্ব দিকে সরে গিয়েছিল। বিএনপির কর্মীরাও বলাবলি করছিল আজই শেষ খেলা! হয় আমরা থাকব, নয় তারা থাকবে! এদিন নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছিল বিএনপির।
শোনা যায় বিএনপি নেত্রীকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে উখিয়া পৌঁছানোর নির্দেশনা ছিল। হাইকমান্ড থেকে বলে দেয়া হয়েছিল তিনি যখন যে সার্কিট হাউজে থাকবেন সেখানেও যেন নিরাপত্তায় ও ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি না থাকে। তবুও অতি উৎসাহিত হয়ে কোনঠাসা সেন্ডিকেট নেতা নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য খালেদার বহরে হামলা করেছিল। সেই হামলার পরপরই ভাষণে সফল হামলার জন্য কর্মীদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছিল।
মঙ্গলবারই আবার সব দর্প-চূর্ণ হয়ে গেল। তাই বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছে আমাদের কেহ জড়িত নাই। থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা সবাই বুঝতে পারে নেত্রীর দৃষ্টি আকার্ষণ নয় বরং নেত্রীর কুদৃষ্টিতে পড়েছে। নেত্রীর এই সব ভূমিকার কথা খালেদা জিয়া ভালভাবে জানতে পেরেছে। এদিকে শেখ হাসিনা লম্বা দিনের মিশন নিয়ে লন্ডন আমেরিকা গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অবশ্যই রোহিঙ্গা বিষয়ে অত্যন্ত সফল ভূমিকা রেখেছিলেন। হঠাৎ আবার গলব্লাডারের ব্যথা বেড়ে গিয়েছিল। দুই বছর আগে সনাক্ত হওয়া এ ব্যাপরটি যখন বেড়ে গিয়েছিল তখন বাধ্য হয়ে এর অপারেশন করে পাথর বের করতে হয়েছিল।
নেত্রী নিজেই বলেছিলেন একাত্তর বছর বয়সে এই অপারেশনের ধকল সামলানো খুবই কষ্টকর। তাই দেশে ফিরে এলেও কিছু দিন বিশ্রামে থাকতেই হবে। দেশে এসেও তাই মন্ত্রী সভার বৈঠকও বাতিল করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুরও গলব্লাডার অপারেশন হয়েছিল। তখন প্রযুক্তি এখনকার মত উন্নত ছিল না। ফলে ১৫ দিনেরও অধিক সময় তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী কে হবে এ নিয়ে আ.লীগের মধ্যে তোড়ঝোড় শুরু হয়েছিল এবং এই কারণে বঙ্গ বন্ধু পরিবারে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে ওই অপারেশনে আগের মত রক্তপাত হয় না। এক দিকে লম্বা জার্নি অন্যদিকে অপারেশন ফলে শেখ হাসিনা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি গণভবনেও নেতাকর্মীদের সাথে এতদিন সাক্ষাত করেননি এবং একই কারণে খুব একটা কথাবার্তাও বলেননি। ফলে খালেদার গাড়িবহরে হামলার ব্যাপারে উত্তজনার পারদ ছড়ায়নি।
খালেদার বিপক্ষে আগে যেমন কথা বলতেন দেশে আশার পর এখনো কোন কথা বলছেন না। মোট কথা দুই নেত্রী অনেকটা কথাবার্তায় সংযত। এর একটি কারণ আগামী নির্বাচন, অপরটি হচ্ছে দুজনই ক্লান্ত। আশা করছি দুজনই পূর্ণ উদ্ধামে আবার কাজ শুরু করবেন তবে উত্তজনা ছড়াবেন না।