বৃহস্পতিবার যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে ফ্লাইওভারে রং ও আলোকসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে। শোভা পাচ্ছে রং বেরং এর পতাকা। এটিই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ট্রাফিক সিগনাল ব্যবহৃত ফ্লাইওভার।

অবাক করার ব্যাপার হলো- এই ফ্লাইওভারে পর্যাপ্ত ‘রাইট টার্ন’ না রাখায় দেশে প্রথমবারের মতো এই ফ্লাইওভারেই বসাতে হয়েছে সিগন্যাল বাতি। রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে পর্যাপ্ত ‘রাইট টার্ন’ না রাখায় অবশেষে ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হয়েছে। ফ্লাইওভারের ওপরে যানজট এড়াতে মালিবাগ এবং মৌচাক পয়েন্টে এই সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে। সাধারণত যানজট নিরসন করতে রাইট টার্নের সুবিধার জন্যই রাস্তার বদলে তৈরি করা হয় ফ্লাইওভার। অথচ যানজট নিরসনের স্বস্তির জায়গায় এই ফ্লাইওভারেই বসাতে হয়েছে সিগন্যাল।

গতকাল সরেজমিন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মালিবাগ অংশে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় শেষ। বিভিন্ন অংশে হালকা ঝালাই ও ধোয়ামোছার কাজ চলছে। কারণ চলতি মাসেই উদ্বোধন হবে ফ্লাইওভারের। নিচের রাস্তায় চলছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। ফ্লাইওভারের মালিবাগ এবং মৌচাক এই দুই জায়গায় বসানো হয়েছে সিগন্যাল। রাইট টার্ন না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্লাইওভার নির্মাতা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মালিবাগ-মৌচাকের মতো জনবহুল এলাকায় জায়গা ছিল খুব কম। তাই আলাদা লুপ বের করার জায়গা ছিল না। এ জন্য সিগন্যাল বসানো হয়েছে।

কুড়িল ফ্লাইওভার ও বনানী জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের নকশাকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক জানিয়েছেন, মালিবাগ ও মৌচাকের সিগন্যালে তৈরি হওয়া ঐতিহাসিক যানজট নিরসনের পরিকল্পনা থেকে এই ফ্লাইওভার প্রকল্পটি এসেছিল। অথচ সেখানেই এখন সিগন্যাল বসানো হয়েছে। এত দীর্ঘ একটি উড়াল সড়কে পর্যাপ্ত রাইট টার্নের ব্যবস্থা না রাখায় তা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে না। তাহলে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্থাপনা ব্যবহার করা আর ভূমির ওপরে তৈরি রাস্তার মধ্যে পার্থক্যটা থাকল না। উল্টো ফ্লাইওভারের কলামগুলোর কারণে রাস্তার জায়গা নষ্ট হলো। অবাক করার বিষয় হলো- এখন ফ্লাইওভারের ওপরে যানজট নিরসনে আবার পুলিশ বসাতে হবে। কারণ, বিদেশে সিগন্যাল মানলেও আমাদের দেশে সিগন্যাল মানার প্রবণতা নেই।

এ ছাড়াও এই ফ্লাইওভারে ওঠার পথ নামার পথের চেয়ে তুলনামূলক খাড়া। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই ফ্লাইওভারে ওঠার দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ মিটার আর নামার ক্ষেত্রে ৩২০ মিটার। ফ্লাইওভারে ওঠার রাস্তা বেশি ঢালু হয়, যাতে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালিয়েই ওঠা যায়। আর নামার রাস্তাটি হয় তুলনামূলক খাড়া। কিন্তু মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। এই ফ্লাইওভারের নকশা করে দিয়েছে বিদেশী প্রতিষ্ঠান। বিদেশে বাঁ দিকে স্টিয়ারিংয়ে চালিত গাড়ির কথা মাথায় রাখায় ওঠানামার লুপে এই বৈপরীত্য দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।এ ব্যাপারে ড. সামছুল হক বলেন, বিদেশী গাড়ির কন্ডিশন এবং স্টিয়ারিংয়ের ধরন আমাদের চেয়ে আলাদা। তাই যে প্রতিষ্ঠান নকশা বুঝে নিয়েছে তারাও এই ভুলটা ধরতে পারেনি। এই ফ্লাইওভারের কারণে গণপরিবহন ব্যবস্থা ও যাত্রী ওঠানামায় ভোগান্তি তৈরি হবে। যেটা হয়েছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে। আমাদের দেশে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রবণতা এবং জবাবদিহিতা কম। ফলে উন্নয়নের নামে টাকা খরচ হয়; কিন্তু জনগণের ভোগান্তি কমে না। তবে নকশা ভুলের কথা অস্বীকার করে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, এই ফ্লাইওভারে নকশা ভুলের কোনো অবকাশ নেই। এটা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে ছড়ানো হচ্ছে।

২০১৩ সালে ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কাজ শুরুর পর পরিবর্তন হয় নকশা। প্রকল্পের ব্যয় ৭২২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ কোটি টাকা। এই ফ্লাইওভারটি উন্মুক্ত করা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার যানজট অনেকটাই কমবে বলে প্রত্যাশা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের।

প্রকল্প প্রতিষ্ঠান তমা গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বিশ্বমানের উপকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। থাকছে আধুনিক সিগনাল ব্যবস্থা ও সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা। যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নোট করা হবে। এদিকে, উদ্বোধনের সময় মৌচাক থেকে মালিবাগ পর্যন্ত সড়কটি বন্ধ রাখা হবে। যানজট এড়াতে ওই সড়কটি ব্যবহার না করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাইদ খোকন।

Wahiduzzaman তার ফেসবুকে লিখেন, অভিনন্দন বাংলাদেশ সরকার!বিশ্বে সর্বপ্রথম ট্রাফিক সিগনালসহ ফ্লাইওভার নির্মান করে বিশ্বরেকর্ড করার কারণে আপনাদের অভিনন্দন! উন্নয়নের মহাসড়কে এই ফ্লাইওভার এবং ট্রাফিক সিগনাল অনন্তকাল জ্বলজ্বল করে জ্বলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here