সংবাদ ডেস্ক ::
সারাদেশেই ডেঙ্গুজ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ১৩৩৫ রোগী। ঢাকায় ৩ ও বরিশালে ২ জনসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬০টিতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ছে ব্যাপকতাও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৩ হাজার ১৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগস্টে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সেকেন্ডারি বা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ১-৫ শতাংশ মারা যেতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিএসএমএমইউর ডা. মিল্টন হলে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকসহ সব মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগ ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা করে।
জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি ডেঙ্গু এনএস১ টেস্ট করা হয়। সেখানে ১ হাজারের বেশি পজেটিভ (রোগী) পাওয়া গেছে। ভাইরোলজি বিভাগে যাদের পরীক্ষা করা হয় তাদের ২১ শতাংশ ডেঙ্গু পজেটিভ পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
বিগত ৮ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিবছরই আগস্টে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন। সেই হিসাবে চলতি বছরের আগস্টে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়ার শঙ্কা থাকছে। আগস্ট মাস নিয়ে আমরা সতর্ক থাকব। তিনি আরও বলেন, ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে চারটি সেরোটাইপের ডেঙ্গুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু সেরোটাইপ-১; সেরোটাইপ-২; সেরোটাইপ-৩ এবং সেরোটাইপ ৪-এর অস্তিত্ব মিলেছে। ২০০০ সালের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় ভাইরোলজি বিভাগের গবেষণায় সেরোটাইপ ১-এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর পর ২০১৩-২০১৬ সাল পর্যন্ত গবেষণায় সেরোটাইপ-১ এবং ২ পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৭ সালে ইসিডিডিআরবির গবেষণায় সেরোটাইপ ৩-এর অস্তিত্ব মেলে। এ বছরের গবেষণায় কিছু কিছু নমুনায় সেরোটাইপ ৪-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গুতে কেউ প্রথম একটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার অন্য একটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়, তাকে আমরা বলি সেকেন্ডারি ডেঙ্গু ইনফেকশন। সেকেন্ডারি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়ে থাকে। প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে না। বরং ওই ভাইরাস আরও বেশি পরিমাণে উৎপাদন হয়। এতে আক্রান্তদের শরীরে কিছু রাসায়নিক পদার্থ বেড়ে যায় ও শক সিনড্রোম হয়। ফলে শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান কাজ করতে পারে না। তখন ব্লিডিং শুরু হয়। সেকেন্ডারি বা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুঝুঁকি ১ থেকে ৫ শতাংশ।
ডা. সাইফ উল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু এডিস ইজিপ্ট ও এডিস এলবোকিপ্টাস মশার মাধ্যমে ছাড়ায়। বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছে। কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে ১ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএস১ পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ৫ দিনের পর থেকে আইজিএম/আইজিই পর্যায়ে যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের সামান্য কিছু মানুষ শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হন। জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত এসব পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারিতে পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৫টি, ডেঙ্গু (এনএস১) পজেটিভ পেয়েছি ১টি। এরপর জুনে ৪৯২টি ডেঙ্গু (এনএসওয়ান) পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ২০৩টি পজেটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৪১ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। জুলাইয়ে ২৯৯৯টি পরীক্ষা করে ৮০০ জন অর্থাৎ ২১ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। জুলাইয়ে অনেকে জ্বর হলেই টেস্ট করতে চলে এসেছেন। এ মাসে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লেও রোগী কমেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ শতাংশ এনএস১ পজেটিভ, ৬ শতাংশ আইজিএম পজেটিভ, ৫ শতাংশ আইজিএম ও আইজিজি পজেটিভ পাওয়া গেছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।