সংবাদ ডেস্ক ::
স্মরণকালের সবচেয়ে আটোসাটো ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হচ্ছে পুরো আয়োজন। ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা ও সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলার বিষয়গুলো মাথায় রেখে নেয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঈদের জামাতকে উৎসবমুখর, নির্বিঘ্ণ্ন ও নিরাপদ রাখতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এটি হবে শোলাকিয়ায় ১৯২তম ঈদুল ফিতরের জামাত। সকাল ১০টায় শুরু হবে ঈদের জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা ও ঈদগাহ কমিটি শোলাকিয়ার জামাতকে সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।
ঈদের দিন শোলাকিয়ায় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, এক হাজার ২০০ পুলিশ, ১০০ র্যাব সদস্য ও বিপুল সংখ্যক আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্চিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ১২টি ওয়াচ টাওয়ার। সুর্নিদিষ্ট ৩২টি গেট দিয়ে মাঠে প্রবেশ করবে মুসল্লিরা। নজদারিতে আকশে উড়বে ড্রোন ক্যামেরা। মাঠের নিরাপত্তায় প্রস্তুত থাকবে মাইন সুপিং ও বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। থাকবে আর্চওয়ে। সবমিলিয়ে শোলাকিয়া মাঠে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। স্থানীরা বলছেন, নিরাপত্তা নিয়ে এমন তোড়জোড় তারা স্মরণকালে আর দেখেননি।
পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও দেশের কয়েকটি স্থানে হামলা এবং এর আগে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তার বিষয়গুলো সাজানো হয়েছে। শুধু শোলাকিয়া মাঠ নয়, পুরো শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে ব্যাপক মাইকিং। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত। তা করতে গিয়ে যা যা করা দরকার সবই কিছুই করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, মুসল্লিরা কেবল জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করবেন।
এদিকে এবারই প্রথম র্যাবের নিরাপত্তা বহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চোখে পড়লে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ারে অবস্থান নেওয়া স্নাইপাররা ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ অঞ্চলের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ এফতেখার উদ্দিন।
এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা এবং টয়লেট। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তুত রাখা হেয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিক্যাল টিম।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, মাঠের নামাজের জন্য শোলাকিয়া মাঠ প্রায় প্রস্তুত। এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, দেয়ালে রং করাসহ মাঠের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। প্রস্তুত রাখা হেয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিক্যাল টিম। দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। আর এবারও নিরাপত্তা বিষয়ে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে কয়েক লাখ মুসল্লির সমাগম হবে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের থাকা-খাওয়া ও আপ্যায়নের ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আসা মুসল্লিদের জন্য দুটি বিশেষট্রেন চলাচল করবে। সকাল ছয়টায় ভৈরব থেকেছেড়ে আসা ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল আটটায়। পরে এ ট্রেনটিই দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরবের উদ্দেশ্যেছেড়ে যাবে। এ ছাড়া আরেকটি বিশেষ ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌঁনে ছয়টায় ছেড়ে এসে সকাল সাড়ে আটটায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। পরে এটি আবার ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবে দুপুর ১২টা।
রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সঙ্কেত দেওয়া হবে।
জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।