সংবাদ ডেস্ক :: সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আগাম নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম ও গণসংযোগ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের ড. জয়া সেনগুপ্তা ও বিএনপির নাছির উদ্দিন চৌধুরী। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই আসনে আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে অবশ্য প্রত্যেকবারই দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও তেমনই ঘটবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে মূলত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা ও নাছির উদ্দিন চৌধুরীর মধ্যে।
স্থানীয় রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের মতে, নির্বাচনী বৈতরণী পেরোনোর বেলায় দিরাই এবং শাল্লায় এখনও ব্যক্তি ইমেজই মুখ্য ভূমিকা রাখে। তবে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ আসনে ধানের শীষ প্রতীককে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নানা কৌশলে এগোচ্ছেন। তবে দুই দলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে।
বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব এখানে প্রায় এক দশকের পুরনো। দলের দিরাই উপজেলার সাবেক সভাপতি প্রয়াত আবদুস শহীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একাংশ কাজ করেছে দীর্ঘ দিন। এই অংশের সমর্থকরা আবদুস শহীদ চৌধুরীর ছেলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। পোস্টার, লিফলেট ও ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে থাকায় সেখানেও পাবেলের পক্ষে তার সমর্থকরা কাজ করছেন।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও এ আসনে অনেক দিনের। দলটির একাংশ অনেকটাই নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আবার দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে দলের ছোট একটি অংশ গত উপনির্বাচনে প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করেছে।
২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত একটানা তিনটিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিএনপির নাছির উদ্দিন চৌধুরী। সুরঞ্জিতের মৃত্যুর পর এখানে নৌকার হাল ধরেছেন তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা। আগামী নির্বাচনে তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুল, শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস, মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন, যুক্ত্যরাজ্য প্রবাসী সামছুল হকও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
দিরাই ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিহির কান্তি দাস জানান, দিরাই-শাল্লা নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের আসন। প্রার্থী হিসেবে ড. জয়া সেনগুপ্তাই জনপ্রিয়। তা ছাড়া বিএনপির নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে লড়তে স্থানীয় আওয়ামী লীগে ড. জয়া সেনগুপ্তার বিকল্প নেই।
অধ্যক্ষ মিহির কান্তি দাস জানান, শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন চৌধুরী ও দলের জেলার সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অবনী মোহন দাসের মধ্যকার সম্পর্ক খুবই খারাপ। এই দুই নেতা পরস্পরের উল্টো পথে হাঁটছেন। তাই বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগকে আরও কৌশলী হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে হবে। এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোটার ও সমর্থকের অভাব নেই। দলটির পক্ষের সুশীল সমাজও বেশ শক্তিশালী। তবে নির্বাচনে জিততে হলে এখনই শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সক্রিয় করতে হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সর্দার রুমি বলেন, এ আসনে ড. জয়া সেনগুপ্তা ও নাছির উদ্দিন চৌধুরী ছাড়া আর কাউকে নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। আটবারের এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ইমেজকে কাজে লাগাচ্ছেন তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা। জাতীয় পার্টি হয়ে বিএনপিতে আসা নাছির উদ্দিন চৌধুরী এ আসনের সাবেক এমপি। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানও। তিনিও চাইছেন তার ইমেজকে কাজে লাগাতে।
নির্বাচন ও দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে বর্তমান এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। তা না হলে তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চালাবেন। ড. জয়া সেনগুপ্তার বিশ্বাস, শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস কখনও দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে থাকবেন না।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনি দিরাই উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। দিরাই ও শাল্লায় বারবার নির্বাচন করেছেন। কখনও হেরেছেন, কখনও জিতেছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে তিনি ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো প্রার্থী নেই। দলে কোনো গ্রুপও নেই। তিনি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে দিরাই উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আবদুস শহীদ চৌধুরীর ছেলে অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রমে মনোযোগী হয়েছেন। তিনি বলেন, এখন জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রথম কাজ হলো বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনা। তাই তিনি দলের মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান বুলবুল বলেন, ড. জয়া সেনগুপ্তা নির্বাচন করতে চাইলে তিনি তার কর্মী হিসেবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকবেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করলে বুলবুল দলের মনোনয়ন চাইবেন।
অবনী মোহন দাস বলেন, ১৯৯৬ সালে আইন পেশা ছাড়ার পর থেকে তিনি রাজনীতির মাঠে রয়েছেন। দিরাই ও শাল্লার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটি ইউনিয়নে ঘরে ঘরে তার পদচারণা রয়েছে। তিনি উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে তিনি নৌকা প্রতীকের পক্ষেই থাকবেন।
ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের পক্ষে লন্ডনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। গত উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইলেও পাননি। দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন।
… [Trackback]
[…] Read More Info here to that Topic: dailyshongbad.com/2017/12/28/ভোটের-হাওয়া-সুনামগঞ্জ-২-আ/ […]