সংবাদ ডেস্ক :: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা অনেকাংশ কমিয়ে এনেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এখন থেকে প্রতিবছরেই একটি করে বিসিএস পরীক্ষা সম্পন্ন করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। আগে একটি পরীক্ষা শুরু করে শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দেয়া হতো না। এমনকি সাড়ে তিন বছর পর একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হতো। বর্তমানে একটি পরীক্ষার মধ্যে আরেকটি পরীক্ষা নিচ্ছে পিএসসি। এদিকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ৩৮তম বিসিএস নিয়ে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে পরীক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে  চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিবছরেই এখন থেকে একটি করে বিসিএস সম্পন্ন করা হচ্ছে। একসাথে একাধিক বিসিএস পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন নন-ক্যাডার পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য স্বল্প সময়ে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে সবচেয়ে যোগ্য মেধাবীকে নিয়োগের সুপারিশ করা।  পিএসসির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত চার বছরে চারটি বিসিএসের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি একাধিক বিসিএসের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর ৩৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এই  বিসিএস থেকে ৬ হাজারের অধিক স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ ৮ হাজার ৫০৭ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট ৩৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ২ হাজার ১৭৫ জনকে ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট ৩৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করে পিএসসি। তাতে সুপারিশকৃত হন ২ হাজার ১৭২ জন।  সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর ৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে কমিশন। এতে ২ হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও ৩৮তম প্রিলি পরীক্ষার কারণে ৩৭তম মৌখিক পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। ৩৮তম প্রিলিমিনারী পরীক্ষার পর ৩৭তম মৌখিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু হবে। এরপর ৩৬তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের ফল প্রকাশ করা হবে। তারপর ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল। পাশাপাশি ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করবে পিএসসি।
কর্মকর্তারা বলছেন, পিএসসির ইতিহাসে এতো দ্রুত সময়ে আগে পরীক্ষা সম্পন্ন হতো না। মূলত পিএসসির চেয়ারম্যানের একক প্রচেষ্টার কারণে এখন যে কোনো পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। পরীক্ষার্থীদের কাছে পিএসসি এখন আস্থার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
৩৮তম বিসিএস নিয়ে সতর্কতা
৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী পরীক্ষা নিয়ে বেশ সতর্ক পিএসসি। এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক আরো বলেন, ৩৮তম বিসিএসে আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমরা স্পেশাল মিটিং করেছি। বিসিএসের ফল প্রদান, পরিদর্শক, দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট অফিসার এবং যারা পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন তাদের নিয়ে ধারাবাহিক সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে। এই সেমিনারের মাধ্যমে কিভাবে পরীক্ষা নিতে হবে-তার বার্তা দেয়া হচ্ছে।
পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, ৩৮তম বিসিএসে সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩২ জন পরীক্ষার্থী প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় অংশ নেবে। ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করে এগুচ্ছে পিএসসি। ৮টি বিভাগীয় শহরে আগামী শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘন্টাব্যাপী এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৬২টি কেন্দ্রে এবং ঢাকার বাইরে ২৮৩টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পরীক্ষার হলে ঘড়ি নিষিদ্ধ থাকার কারণে পিএসসি থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে ঘড়ি সরবরাহ করা হবে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। নারী পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশে সহায়তায় থাকবে নারী পুলিশ সদস্য। ২ হাজার ২৪টি শূন্য পদে নিয়োগ দিতে ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি গত ২০ জুন প্রকাশ করা হয়।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here