মৌলভীবাজার সংবাদদাতা :: একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়ের পর সারা দেশের মানুষ তখন স্বাধীনতার আনন্দে মেতেছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা অবশ্য মুক্ত হয়েছিল আরও ৮ দিন আগে ০৮ ডিসেম্বর।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাম্প করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সমবেত হয়েছিলেন বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা।

এ অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ ক্যাম্পে ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণ ঘটে। তছনছ হয়ে যায় চারপাশ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ছিন্ন-ভিন্ন মরদেহ। শহীদ হন ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা।

সেই থেকে প্রতি বছর ২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারে পালিত হয়ে আসছে স্থানীয় শহীদ দিবস হিসেবে।

সেদিনের শক্তিশালী মাইন বিস্ফোরণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। সেখানে প্রতি বছর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- সুলেমান মিয়া, রহিম বক্স খোকা, ইয়ানুর আলী, আছকর আলী, জহির মিয়া, ইব্রাহিম আলী, আব্দুল আজিজ, প্রদীপ চন্দ্র দাস, শিশির রঞ্জন দেব, সত্যেন্দ্র দাস, অরুণ দত্ত, দিলীপ দেব, সনাতন সিংহ, নন্দলাল বাউরি, সমীর চন্দ্র সোম, কাজল পাল, হিমাংশু কর, জিতেন্দ্র চন্দ্র দেব, আব্দুল আলী, নুরুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল, আশুতোষ দেব, তরণী দেব ও নরেশ চন্দ্র ধর।

তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডিং অথরিটি মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বাংলানিউজের কাছে সেদিনের ভয়াবহতার বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মৌলভীবাজার থেকে বিতাড়িত করে ০৮ ডিসেম্বর কাঙ্খিত বিজয় অর্জন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানকারী যোদ্ধারা এসে মৌলভীবাজার শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পে অবস্থান নেন’।

‘পাকিস্তানি বাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন ও রেখে যাওয়া প্রচুর অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা এনে ক্যাম্পের সামনের খোলা জায়গায় রেখেছিলেন। মাইনগুলোর বেশিরভাগ ছিল ‘অ্যান্টি ট্যাংক’। আমি সেদিন কমান্ডিং অথরিটি হিসেবে সকালে ক্যাম্প পরিদর্শন করে বের হয়ে মাইনগুলো দেখে সবাইকে সতর্ক করেছিলাম। তারপর বের হয়ে পড়ি সেখান থেকে’।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here