প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে হবিগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ। হবিগঞ্জ সদর-লাখাই আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের প্রস্তাবে এই নামকরণ করা হয়েছে। ফলে হবিগঞ্জবাসী প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমের কিছুটা হলেও প্রতিদান দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংসদ সদস্য আবু জাহির এমপি।
আবু জাহির বলেন, ‘আমি হবিগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজটির নাম শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ নামে নামকরণ করার জন্য একটি ডিও লেটার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাই। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে অনুমোদনের জন্য ডিও লেটারটি পাঠায়। পরবর্তীতে গত ২৯ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় হবিগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজটির নাম শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে এর অনুলিপি দেওয়া হয়।’
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ শহরের নিউফিল্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির জনগণের পক্ষে হবিগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যায়, শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা ও বাল্লা স্থলবন্দর আধুনিকায়ন করার দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা ও বাল্লা স্থলবন্দরকে আধুনিকায়নের ঘোষণা দেন।
দুই মাসের মধ্যেই ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহমুদা আক্তার ২৪/(১০) স্মারকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেন হবিগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে। ঘোষণার অল্প সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ায় হবিগঞ্জবাসী নতুন আশায় বুক বাধেন। প্রশাসনিক অনুমোদনের পর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভায় হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালকে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি হোস্টেল করার জন্য নির্ধারণ করা হয় পুরাতন হাসপাতালের পাশের একটি জায়গাকে। এর কিছুদিন পর মন্ত্রণালয় থেকে একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল হবিগঞ্জে এসে অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করেন।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ চালুর কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদ পাওয়ার পরও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছিল নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যা ভবনকে। সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সফিয়ানকে নিয়োগ করা হয় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ওই শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি।
হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবু জাহির বিষয়টি সংসদের কাছে উত্থাপন করতে থাকেন। অবশেষে চলতি শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭ জন শিক্ষকও পদায়ন করা হয়েছে এই মেডিক্যাল কলেজে। ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নির্ধারণ করা হয়েছে হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালকে। ছাত্রদের জন্য অনন্তপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের আড়াইশ শয্যার ভবনে ১০ জানুয়ারি থেকে শেখ হাসিনা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পাঠদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন এমপি আবু জাহির। ইতোমধ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগেরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু সফিয়ান জানান, হবিগঞ্জ জেলার মেডিক্যাল কলেজটি প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ হওয়া যতার্থ হয়েছে।