সংবাদ ডেস্ক :: দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সিলেট ও বরিশালের নারীরা পিছিয়ে রয়েছে।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নারীদের তুলনায় এ দুই বিভাগের নারীদের শ্রমবাজারে প্রবেশের সম্ভাবনাও কম। বয়স, শিক্ষা এবং বৈবাহিক অবস্থা শ্রমবাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে। গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই এ বিষয়গুলো সমানভাবে প্রভাবিত করে। তবে গ্রামের তুলনায় শহরের নারীদের শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ বেশি।
এছাড়া আত্মকর্মসংস্থানের চেয়ে নির্ধারিত বেতনের চাকরির প্রতি দেশের যুবশক্তি বেশি আগ্রহী। তবে ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল সময়ে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারীর অংশগ্রহণ এখন ৩৬ শতাংশ। ২০০৬ সালে ছিল ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বিআইডিএস বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে ‘লেবার সাপ্লাই অ্যান্ড ইটস চেঞ্জেস ডিউরিং ২০০৬ টু ২০১৬ : ফোকাস অন জেন্ডার অ্যান্ড রিজিওনাল ডিফারেন্স’ নামের এ গবেষণা পত্রটি প্রকাশ করা হয়।
সম্মেলনের প্রথম দিনে তিনটি অধিবেশনে কৃষি, শ্রমবাজার এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে ১১টি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষকরা। অধিবেশনগুলোয় সভাপতিত্ব করেন ইকোনমিক রিসার্স গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির, আইএলওর সাবেক স্পেশাল অ্যাডভাইজার ড. রিজওয়ানুল ইসলাম এবং ইন্সটিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এমএ বাকি খলিলি।
মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের যেসব এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি এবং সোলার প্যানেল যাদের অবলম্বন, ওই এলাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে একটি পরিবারের ব্যবসা বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো। কৃষির বাইরে অকৃষি খাতে যারা ব্যবসা করছে, তাদের ব্যবসা বেশি হচ্ছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কল্যাণে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে মৎস্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আয় বেড়েছে ৭ থেকে ১০ শতাংশ। তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নও বেড়েছে। গবেষণাটি করা হয়েছে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই; কিন্তু সোলার প্যানেল আছে, চর, উপকূলীয় এলাকা, সমুদ্র এবং নদীর তীরের মানুষ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলের দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫৪০ পরিবারের ওপর জরিপ পরিচালনা করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
এছাড়া অপর গবেষণায় দেখা গেছে, আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবা ও দারিদ্র্যবিমোচনের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আসা দারিদ্র্যবিমোচনের দ্বার খুলে দেয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যাংকিং সেবা বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা মানে আয় ও সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা। কার্যকর দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য এ সংক্রান্ত যে কোনো কর্মসূচিতে ব্যাংকিং তথা আর্থিক সেবা অন্তর্ভুতি নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে পণ্যের ওপর কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যত হরতাল ও অবরোধ হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ হয়েছে অর্থনৈতিক কারণে। হরতালের ডাক দিলেই প্রথম দিনে মোটা চালের দাম কেজিতে গড়ে ৩৪ পয়সা বেড়ে যায়। হরতাল চলাকালীন চিকন চাল ৪২ টাকা ২৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা ২১ পয়সা হয়। মধ্যম মানের চাল ৩৪ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা ৯৬ পয়সা হয়। এছাড়া মোট চাল ২৯ টাকা ২৭ পয়সা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা ৮৯ পয়সায় দাঁড়ায়। তবে হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় গরিব মানুষ। তাদের আয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। হরতালে ঢাকার তুলনায় জেলা পর্যায়ে চালের দাম বেশি বাড়ে। কৃষি জমির ব্যবহার নিয়ে পরিচালিত অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী কৃষিতে জমির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কৃষি জমির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য বিদ্যমান কৃষি জমির আরও নিবিড় ব্যবহার এবং উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
শস্য বৈচিত্র্যকরণবিষয়ক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোয় শস্য ও খাদ্যাভ্যাস বৈচিত্র্যকরণ বেড়েছে। বলা হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাসের বৈচিত্র্যের সঙ্গে আয় ও সম্পদের ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ যেসব পরিবারে আয় ও সম্পদ বেড়েছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য এসেছে। প্রান্তিক পর্যায়ে শস্য ও খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য আনতে গরিবদের খাদ্য সহায়তার পরিবর্তে উচ্চফলনশীল বীজ সরবরাহ করা উচিত।