স্পোর্টস ডেস্ক :: বিপিএল এর চট্রগাম পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বীতা জমজমাট হয়ে উঠে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ প্রথম খেলার পর দ্বিতীয় খেলায় রেকর্ড গড়ে জয় পেয়েছে চিটাগাং ভাইকিংস। সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়া চিটাগাং এর ২১১ রানের সংগ্রহে চাপা পড়ে সিলেট । তবে সিলেট লড়াই করেছে সমান তালে। দুর্দান্ত শুরু করেও বিশাল টর্গেটের কারণে ৪০ রানে সিলেটকে পরাজয় বরণ করতে হয়। আর তাতে সপ্তম ম্যাচে মাত্র দ্বিতীয় জয়ে চিটাগং পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নিচ থেকে এক ধাপ ওপরে উঠে এলো। নিজেদের ঘরেই টানা তিন ম্যাচে জয়ের চমক দেখানো সিলেট পেল টানা পঞ্চম হারের তেতো স্বাদ। ম্যাচের সেরা সিকান্দার রাজার মারমার-কাটকাট ৯৫ রানই আগে ব্যবধানটা তৈরি করে দিয়েছিল।
.
আন্দ্রে ফ্লেচার হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। তাতে ২১২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে অনেকটা সময় পথেই ছিল সিলেট। এই তো ১৩.২ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে তাদের সংগ্রহ ১২৩ রান। কিন্তু এরপরই চিটাগং বোলারদের চাপে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সিলেট। ৮ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে ৫টি উইকেট। আর সেই ব্যাটসম্যানরা হলেন ফ্লেচার (৪৬ বলে ৭১), বাবর আযম (৩২ বলে ৪১), সাব্বির রহমান (৩), আবুল হাসান (০) ও টিম ব্রেসনান (২)। ১৬ ওভারে পা রাখতেই প্রবল আশার জায়গা হারিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত নাসিরদের দল। শেষ বলে গিয়ে তাদের দরকারের খাতায় ৪১ রান!
চিটাগংয়ের বোলারদের মধ্যে ভ্যান জিল, সৌম্য সরকার দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। তাসকিন আহমেদের শিকার ৩ উইকেট। দারুণ মার খেয়েও চিটাগংয়ের বোলাররা যেভাবে ফিরেছেন তা বলার মতো। ৮ উইকেটে ১৭১ রানে থেমেছে সিলেট। বলে রাখতে হয়, এই মাঠেই শুক্রবার দিনের প্রথম খেলায় ১৫৯ রানের টার্গেট তাড়া করেও ৯ রানে খুলনা টাইটান্সের কাছে হারতে হয়েছে রংপুর রাইডার্সকে।
ম্যাচের রাজা সিকান্দার
নাসির হোসেন আর সিকান্দার রাজার আক্ষেপটা মিলে যায়! ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেললেন সিকান্দার রাজা। নিজেদের দর্শকদের সামনে জ্বলে উঠলো এই জিম্বাবুইয়ান ব্যাটারের উইলো। আর সেটি দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই সিলেট সিক্সার্স অধিনায়ক নাসির হোসেন তাকে নতুন জীবন দেওয়ায়। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে নিচের দল চিটাগং ভাইকিংস নিজেদের শহরে সেই সিকান্দারের ব্যাটেই গড়লো এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ৫ উইকেটে ২১১ রান। আর শেষ ওভারে যখন চাইলেই এবারের বিপিএল এবং নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা করে ফেলা যায় তখনই ভাগ্যদেবী তার হাত সরিয়ে নিলেন সিকান্দারের মাথার ওপর থেকে। ৪৫ বলে ৯টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৯৫ রান করে ফিরেছেন সিকান্দার।
এখন পর্যন্ত এবারের টুর্নামেন্টে মাত্র একটি জয় চিটাগংয়ের। ঘরের দর্শক-সমর্থকদের সামনে ৪টি ম্যাচ। এই ম্যাচগুলো দিয়েই তাদের লড়াইয়ে ফেরার আশা। কিন্তু সৌম্য সরকার (১), এনামুল হক বিজয়রা (৩) শুরুতেই চাপে ফেলেন দলকে। টস হেরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তবু চিটাগংয়ের রান তরতরিয়ে ছোটে ওপেনার লুক রনকির আগুনে। ২৫ বলে দিয়ে যান ৪১। ৪০ রানে তার ক্যাচ ছেড়েছেন নাসির। সেটার মূল্য দিতে হয়নি দ্রুত আবুল হাসান তাকে তুলে নিলে।
প্রথম থেকেই মারার লাইসেন্স নিয়ে নামছিলেন যেন চিটাগংয়ের সবাই। সিকান্দারের আগে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকান স্টিয়ান ভ্যান জিল লাগাম হাতে নিয়ে মারছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তার সাথে যোগ দিয়ে হাত খুলে বোলারদের ছাতু করতে থাকেন সিকান্দার। ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেই। সেখান থেকে ভ্যান জিল ও সিকান্দার দলকে নিয়ে যান ১৩৮ পর্যন্ত। তখন ম্যাচের মাত্র ১৪তম ওভার।
কামরুল ইসলাম রাব্বি একাদশে ফিরে ২৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রান করা ভ্যান জিলকে ফেরান। জুটি ভাঙে। কিন্তু সিলেটকে মোটেও স্বস্তি দেন না সিকান্দার। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন দলের সংগ্রহকে। পেরিয়ে যায় ২০০। আগে ৯৩ ছিল ক্যারিয়ারসেরা। সিকান্দার সেটি পেরিয়ে আর একটি শটের দুরত্বে। এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি তাহলে তারই। এই আসরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরটা ততক্ষণে তো হয়েই গেছে।
ওই একটা শটই তো? কামরুলকে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে উড়িয়েই মারলেন। কিন্তু বুঝলেন, হলো না। বাউন্ডারি লাইনে আন্দ্রে ফ্লেচার সিকান্দারের ক্যাচটা নিলেন।
কিন্তু প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মনও যে এই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয় করেছেন সিকান্দার, তাও বোঝা গেল। খেদ নিয়ে হাসতে হাসতে ফেরার সময় পাচ্ছিলেন সিলেট খেলোয়াড়দের পিঠ চাপড়ানি। তাতে হয়তো স্বান্তনাও ছিল। কিন্তু এমন সুযোগ সিকান্দারের টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৬৯তম ম্যাচে এসেছিল। সেটি তাকে নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার বানিয়ে হৃদয় ভেঙে ৫ রানের আক্ষেপে পুড়িয়ে মারলো। কিন্তু সিলেটের তো এই ম্যাচে জেতার পথটা তো সিকান্দারই অসম্ভববের দিকে ঠেলে দিয়ে গেছেন আগেই। শেষ হাসিটা তাদেরই। সিলেটের ৯ ম্যাচে এটা পঞ্চম হার। আর ৫ হারই টানা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
চিটাগং ভাইকিংস : ২০ ওভারে ২১১/৫ (রনকি ৪১, সৌম্য ১, এনামুল ৩, ভ্যান জিল ৪০, সিকান্দার রাজা ৯৫, নজিবুল্লাহ ১৯, রিস ৪; মুদাসসার ০/৩১, নাসির ১/৩৪, তাইজুল ০/৩০, ব্রেসনান ১/৩৮, আবুল ১/৪২, রাব্বি ২/৩৫)।
সিলেট সিক্সার্স : ২০ ওভারে ১৭১/৮ (গুনাথিলাকা ১০, ফ্লেচার ৭১, বাবর ৪১, সাব্বির ৩, ব্রেসনান ২, আবুল হাসান ০, নুরুল ২৮, নাসির ৮, কামরুল ৪; সানজামুল ১/২৪, সিকান্দার ০/১৩, শুভাশিস ০/৩০, তাসকিন ৩/৩১, সৌম্য ২/১৭, ভ্যান জিল ২/১৪)।
ফল : চিটাগং ৪০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সিকান্দার রাজা।