সংবাদ ডেস্ক :: সুনামগঞ্জ শহরের হাজীপাড়ার পূর্ব মাথায় রাস্তার পাশে জেলা সমবায় কার্যালয়ের মালিকানাধীন জায়গায় বর্জ্য ফেলে রেখেছে আশপাশের বাসার বাসিন্দারা। সেই ময়লা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তুলে না নেওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
এ সময় দেখা গেল, পৌর শহরের ইকবালনগরের কুড়ানি জাহানারা বেগম অবশিষ্ট ময়লা ঘেঁটে কিছু জিনিস বের করে বস্তায় ভরছেন। এতে দুর্গন্ধ আরো বেশি ছড়াচ্ছে। পথচারীরা চলছিল নাক চেপে। চিত্রটি গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার।
পাড়ার বাসিন্দারা জানায়, এখানে ময়লা ফেলার জন্য কোনো পাত্র নেই। পাড়ার শতাধিক বাসিন্দা খোলা এ স্থানে ময়লা ফেলে যায়। তা ছাড়া নাগরিকদের অনেকেই যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে। সেই বর্জ্য ও ময়লা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় স্তূপ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
হাজীপাড়া থেকে সোজা পূর্ব দিকে নতুনপাড়া সড়কে গেলে দক্ষিণ নতুনপাড়ার শেষ মাথায় ঠিকাদার সুরুজ আলীর বাসার সামনে দেখা যায় একইভাবে খোলা জায়গায় ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে।
এখানে পানি নিষ্কাশনের নালাও এসে শেষ হয়ে গেছে। পারিবারিক জায়গাটি খালি পড়ে থাকায় পাড়ার সবাই এখানেই ময়লা ফেলে। এটি রীতিমতো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নালার পানি সেই বর্জ্যে মিশে দুর্গন্ধ আরো বাড়িয়েছে।
এই অস্থায়ী ভাগাড়ের সামনেই ব্যবসায়ী অঞ্জন রায়কে নাকে-মুখে মাস্ক পরে তাঁর মুদি দোকানে বসে থাকতে দেখা যায়।
পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাণিজ্যিক এলাকায় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালালেও আবাসিক এলাকায় তেমন আসেন না। এতে দিনের পর দিন জমা হয়ে ময়লার স্তূপ হয়ে যায়, ছড়ায় দুর্গন্ধ। পৌরবাসীর অভিযোগ, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা পরিষ্কারের পরিবর্তে বেশির ভাগই রাস্তাঘাট ঝাড়ু দিয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
অঞ্জন রায় বলেন, ‘দুর্গন্ধের কারণে প্রতিদিন আমি মাস্ক পরে দোকানদারি করি। এখন দুর্গন্ধ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় ভাবছি দোকান সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাব। ’ তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এখানে ময়লা নিতে আসে না।
অঞ্জন রায় ময়লার স্তূপ দেখিয়ে বলেন, ‘আমরা দু-তিন মাস পর পর ময়লা নিজ উদ্যোগে পুড়িয়ে ফেলি। ’ এখানে ময়লা ফেলার সুব্যবস্থা করার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়মিত ময়লা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
দক্ষিণ নতুনপাড়া থেকে উত্তরমুখী পথ ধরে যেতে যেতে দেখা গেল নতুনপাড়ার সুয়েল আহমদের পুকুরের পাশে একটি সাইনবোর্ড লাগানো। এতে লেখা রয়েছে, ‘এখানে ময়লা ফেলা নিষেধ’। তাঁর পুকুরের তিন কোনায় ভাগাড়। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় ময়লার স্তূপ বড় হচ্ছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পুকুরের পূর্ব পাশের রাস্তা ধরে মরাটিলা রোড হয়ে এইচএমপি স্কুলের রাস্তায় পড়ার আগে দেখা গেল, অধ্যাপক পরিমল কান্তি দের বাসার সামনে ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই লোকজন এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মরাটিলা রোডের বাসিন্দা প্রভাষক হরেন্দ্র চক্রবর্তী ভাগাড় দেখিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার হচ্ছে না। আমরা পাড়ার লোকজন কিছুদিন পর পর ময়লার স্তূপ আগুনে পুড়িয়ে ফেলি। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে একাধিকবার ময়লা পরিষ্কারের জন্য বলেও কাজ হচ্ছে না। ’ তিনি বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কেবল মূল রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেয়। তারা আবাসিক এলাকার বর্জ্য নিতে আসে না।
দুপুর পৌনে ১টায় শহরের সাহেববাড়ি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ঘাটই যেন ভাগাড়। সুরমা নদীর তীরে স্থানে স্থানে ময়লার স্তূপ। উত্তর আরপিন নগর পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনায় দেখা গেল, ছোট একটি ময়লা রাখার প্লাস্টিকের কনটেইনার খালি পড়ে আছে। আশপাশের লোকদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল, এই কনটেইনারের বদলে বেশির ভাগ মানুষ সুরমা নদীর তীরে যত্রতত্র ময়লা ফেলে। এতে পুরো ঘাটই ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে।
সাহেববাড়ি ঘাটের ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরার ময়লা আমরা কিছুদিন পর পর পুড়াই। এখন রইদ থাকায় দুর্গন্ধ কিছু কম। বৃষ্টি অইলে রাস্তায় আটা (হাঁটা) যায় না, বইয়া দোকানদারি করা যায় না। পৌরসভার কেউ ময়লা নিতো আয় না। ’
সাহেববাড়ি ঘাট থেকে হাঁটতে হাঁটতে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কাউন্সিলর সামরান আলীর বাসার কোনা পর্যন্ত গেলে দেখা যায় সেখানেও ময়লার স্তূপ। এভাবে ২২ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটারের এ পৌরসভার মূল এলাকা ও বর্ধিত এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। মূল এলাকায় জায়গা কম থাকায় ময়লার স্তূপ দৃশ্যমান ও দুর্গন্ধ বেশি। নতুনপাড়া, হাজীপাড়া, মরাটিলা, তেঘরিয়া, লম্বাহাটি, ষোলঘর, হাছননগরের স্থানে স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ে। বর্ধিত এলাকায় এখনো খোলা জায়গা, খাল-ডোবা থাকায় নাগরিকরা সহজেই ময়লা ফেলতে পারছে। এতে দুর্গন্ধ তেমন ছড়াচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর প্রায় ১০০টি পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত আছে ৪৮ জন। প্রতিদিন রাতে দুটি ট্রাকে ১৬ জন কর্মী নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করে। বাকিরা আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় ময়লা পরিষ্কার করে। বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য অন্তত আটটি যানবাহন রয়েছে। একটি গাড়িতে ৮-১০ জন কর্মী লাগে। তারা পাড়া-মহল্লার নির্ধারিত স্থান থেকে নিয়মিত বর্জ্য নিয়ে যায়। বাসিন্দারা নির্ধারিত স্থানের বদলে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় স্তূপ ও গন্ধ বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে পৌরবাসীর সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা তদারককারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা নিয়মিতই পাড়া-মহল্লা ও বাণিজ্যিক এলাকায় যায়। সেখান থেকে বর্জ্য নিয়ে আসে। নাগরিকরা নির্ধারিত স্থানের বদলে যত্রতত্র বর্জ্য ও ময়লা ফেলে সমস্যার সৃষ্টি করছে। তা ছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অপ্রতুলতার কারণেও অনেক সময় নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য পরিষ্কার করতে সমস্যা হয়। ’
প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল বলেন, ‘পৌরসভার সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ নাগরিকদের সমন্বয়েই পৌরসভাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে একযোগে কাজ করতে হবে। সচেতন নাগরিকরা সহযোগিতা করলে এ সমস্যা থাকবে না। আমাদের কোনো দুর্বলতা থাকলে অবশ্যই নাগরিকদের স্বার্থে আমরা সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠব। ’