কিছুদিন আগেও আমি ভারতে গিয়েছিলাম। প্রায় প্রত্যেক দিন আমার সঙ্গে কথা হয়। আমার স্বামী সালাহউদ্দিন আহমেদ এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহরের একটি সরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি নানারকম বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। দিন দিন তার রোগের মাত্রা বাড়ছে।তার উন্নত চিকিৎসার দরকার। সরকার তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু, সেখানকার আদালতে তার নামে একটি মামলা চলছে। মামলার রায় না হলে তাকে কিভাবে ফিরিয়ে আনা হবে? কথাগুলো বলছিলেন ২০১৫ সালে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালীন মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী ভারতে উদ্ধার হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। প্রায় ২ বছর ৪ মাস ১১ দিন আগে সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতের মেঘালয়ের শিলং থেকে উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে, সালাহউদ্দিন আহমেদের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ। পুলিশ নিজের উদ্যোগে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলো। কিন্তু, ওই জিডির এখনো পর্যন্ত কোনো রহস্যের কিনারা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সালাহউদ্দিনের নিখোঁজের ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে তার নিখোঁজের বিষয়ে তথ্য জানানো হবে।

২০১৫ সালের ১০ই মার্চ রাতে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি নম্বর সড়কের ৪৯/বি নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে যায়। ২০১৫ সালের ১১ই মে ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর সেখানকার থানা পুলিশ তাকে প্রথমে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সে ভর্তি করেন। পরে তাকে একটি সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাসপোর্ট ও ভিসাবিহীন অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানকার একটি আদালতে তার বিষয়ে বিচার চলছে।
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন খান মানবজমিনকে জানান, সালাহউদ্দিনের নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল। জিডিটি থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। তবে এখন পর্যন্ত তার নিখোঁজের কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের সকল মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করেছে ডিবি। কিন্তু, কোনো নম্বরে এবং কার সঙ্গে সালাহউদ্দিন কথা বলেছেন তা তদন্তে জানা যায়নি। ডিবি পুলিশের ধারণা যে, সালাহউদ্দিন ইন্টারনেটের ভাইভার বা ইমোতে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এছাড়াও তার নামে যে প্রেস রিলিজ প্রকাশিত হতো সেই প্রেস রিলিজ দাতার সঙ্গে তার যোগাযোগের ক্লু পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, তিনি নিখোঁজের পর পুলিশ আশেপাশের লোকজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেছে। কিন্তু, ঘটনাস্থলের কোনো নারী ও পুরুষ তার নিখোঁজের বিষয়ে কোনো জবানবন্দি দেননি। ডিবি পুলিশের ধারণা, সালাহউদ্দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে স্বেচ্ছায় ভারতে গেছেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি ভারতের মেঘালয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন।

এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী হাসিনা আহমেদ জানান, তার নিখোঁজের ঘটনায় আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, পুলিশ আমাদের কোনো জিডি নেয়নি। তিনি আরো জানান, আমরা সেখানকার আদালতের বিচারের রায়ের ওপর তাকিয়ে আছি। আমার স্বামী একজন রাজনীতিবিদ। কেন তাকে অন্যের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে। আর বিচার না হলে তাকে কিভাবে ফিরিয়ে আনবে সরকার?

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন মানবজমিনকে জানান, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের জন্মগত কোনো নাগরিক যদি বাংলাদেশে ফিরতে চায় তাহলে তার নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রত্যাবর্তন চুক্তি আছে। সেই চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রত্যাবর্তন চুক্তির নামে কোনো সম্মানী ব্যক্তির বদলে কোনো সন্ত্রাসী বা ফৌজদারি অপরাধীকে যেন ফেরত পাঠানো না হয়। এতে সম্মানী ব্যক্তির সঙ্গে ওই সন্ত্রাসীর আর কোনো পার্থক্য থাকলো না।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here